শিশুদের ফিডারে লাখ লাখ প্লাস্টিককণা,স্বাস্থ্যঝুকি চরমে

221

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক।

বিশ্বব্যাপী দুগ্ধজাত শিশুদের শরীরে দিনে লাখ লাখ ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা (মাইক্রোপ্লাস্টিক) ঢুকছে। এ প্লাস্টিককণা তাদের শরীরে খাদ্য, পানীয় ও বাতাসের মাধ্যমে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে। দ্য নেচার ফুড জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সব ধরনের প্লাস্টিকের প্যাকেট বা পাত্রে প্লাস্টিককণা মিলছে, যা খাদ্য ও পানীয় বিষাক্ত ও দূষিত করে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, একটি শিশু তার প্রথম বছরে প্লাস্টিকের ফিডারের মাধ্যমে দিনে প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার প্লাস্টিককণা খেয়ে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে এই হার আরও বেশি, সেখানকার বোতলে প্রায় ২০ লাখ প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা মেলে।

উচ্চ তাপমাত্রায় শিশুর দুধের বোতল বা ফিডার জীবানুমুক্ত করা হলেও সেগুলোতে প্লাস্টিকণা মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিকসামগ্রীর (বোতল, পাত্র) বিকল্প হিসেবে কাঁচের বোতলকে দেখছেন। তবে কাঁচের বোতল শিশুদের জন্য ব্যবহার সহজযোগ্য নয়, এটি ভারি ও পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিশুদের বোতলে বিপজ্জনকহারে প্লাস্টিকণার সন্ধান মেলায় আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজ দুবলিনের অধ্যাপক জন বোলাল্ড আশঙ্কা করে বলেন, গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করা একটি গবেষণার হিসেবে, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষেরা দিনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক ভক্ষণ করছে। কিন্তু এটি আমাদের হিসেবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা হাজার নয়, এই সংখ্যা লাখ লাখ ছাড়িয়েছে।

খাবার পানির বোতল, চায়ের প্যাক, পলিথিনে মোড়ানো খাবার কোথায় নেই মাইক্রোপ্লাস্টিক! বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন যে এসব প্লাস্টিককণার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিষাক্ত কেমিকেল ঢুকছে। এমনকি এই প্লাস্টিককণা গভীর সমুদ্র ও হিমবাহেও ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক লিওয়েন জিয়াও বলেন, প্লাস্টিককণার মূল উৎপত্তি প্লাস্টিক থেকে। কিন্তু এর ব্যবহারও বেড়েছে। কাজেই অতীতের থেকে প্লাস্টিকের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আমাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক হল ন্যানো পার্টিকল। যা খালি চোখে দেখা যায় না। প্লাস্টিক গলে না ঠিকই, কিন্তু প্লাস্টিক ভঙ্গুর। ভাঙতে ভাঙতে ন্যানো পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এমনই পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের। দ্য নেচার পত্রিকার গবেষণায় দেখা গেছে, মিউকাস মেমব্রেন বা ঝিল্লিতে আটকে গিয়ে বিরাট বিপদ ডেকে আনতে পারে মাইক্রো প্লাস্টিক। প্রথমে ‘ইরিটেশন’ তৈরি করবে। তারপর টিউমার। যা ম্যালিগন্যান্টও হতে পারে। যদি হাওয়ায় মাইক্রো প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ফুসফুস। ‘লাং কনজেশন’ হতে পারে। অথচ কোনও প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়বে না। হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখে বুঝতে হবে। কেউ ক্যান্সার ও অ্যালার্জিতেও আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাইক্রো প্লাস্টিক যদি আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে যায়, তাহলে মাইক্রো ভিলাইয়ের খাদ্যশোষক ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেবে। যা খাবে, তা-ই বদহজম হয়ে যাবে। রোগ নির্ণয় করা না গেলে চিকিৎসা মিলবে না। এমন অনেক ঘটনাই প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষ করে থাইরয়েডের গ্রন্থির বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

সুত্র দৈনিক ভোরের কাগজ