গুণীজনের সম্মান করা, আমাদের কর্তব্য: প্রধানমন্ত্রী

218

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ যখন একটি সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি দেশের জন্য অবদান রাখে তাদের সম্মান করা আমাদের কর্তব্য।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

 

গত ২০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২০’ প্রদানের জন্য মনোনীত করে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

জাতির পিতার নেতৃত্ব যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনা পর্ব তুলে ধরার পাশাপাশি ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সবকিছু থমকে যাওয়ার দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা হয়, তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল, মিলিটারি ডিকটেটর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই এই যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধ করে দেয়। যারা কারাগারে বন্দী ছিল তাদেরকে মুক্তি দেয়। আর যারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদেরকেও ফিরে আনে। শুধু এখানেই শেষ না, তাদেরকে মন্ত্রীত্ব দেয় উপদেষ্টা করে। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীরা খুব গর্ব করে বলত, কে তাদের বিচার করবে? সেই খুনিদেরকে পুরস্কৃত করেছিল বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। এই স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে একবার চিন্তা করে দেখেন, আপনাদের স্বাধীন বাংলাদেশের দূতাবাসে কারা ছিল? অথবা দূতাবাসের প্রতিনিধি হিসেবে? তারা হল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খুনি, হত্যাকারী। তাহলে সে দেশের ভাবমূর্তি কি হতে পারে? সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাগুলো একে একে তা নস্যাৎ করা হয়।

‘২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তারপর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরা চেষ্টা করেছি। কারণ আমরা তো মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি কেনো আমরা অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো, মাথা নিচু করে চলবো? বিজয়ী জাতি সারাবিশ্বে বিজয়ের বেশে চলবে। জাতির পিতার যে চেতনা এবং যে চেতনায় আমার লাখো শহীদ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছে, তাদের সেই আত্মত্যাগের কথা, আমার লাখো মা-বোন; তাদের মহান আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেই আমরা এই বাংলাদেশকে আবার গড়ে তুলতে চাচ্ছি ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া, লেখাপড়া এবং শিক্ষার ব্যবস্থা যেন প্রতিটি মানুষ পায় তা ব্যবস্থা করা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা, প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালানো, প্রতিটি গৃহহারা-ভূমিহীন মানুষের ঘর বাড়ি তৈরি করে দেয়া, অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করা, আত্মমর্যাদাশীল করা, কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে হাত পেতে নয়, নিজের পায়ের দাঁড়িয়ে সম্মানের সাথে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলা; এ লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেন স্বাধীন জাতি হিসাবে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, মুজিববর্ষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করছি। এই মুজিববর্ষে আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্রমুক্ত ক্ষুধামুক্ত করবো-উন্নত সমৃদ্ধ করবো, দেশের কোনো মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় সেইদিকেই লক্ষ্য রেখেই আমরা কিন্তু আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি’।

তিনি বলেন, আমরা যথেষ্ট অর্জনও করেছি। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য করোনাভাইরাস নামে এমন এক ভাইরাস আসলো যা শুধু আমাদের বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বব্যাপী মানুষকে স্থবির করে দিয়েছে। অর্থনীতি স্থবির করে দিয়েছে। কিন্তু সেটা মোকাবেলা করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেন দেশের মানুষগুলি সুরক্ষা পায় এবং মানুষ যেন ভালভাবে চলতে পারে এবং অর্থনীতি যেন গতিশীলতা না হারায়।

শেখা হাসিনা বলেন, তাছাড়া দেশের উন্নয়নে অনেকগুলি মেগা প্রজেক্টও আমরা নিয়েছি। অনেক কাজ আমরা করে যাচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে যাচ্ছি। আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে প্রায় খাদ্যে উর্ধ্বত্তে দেশের উন্নীত হয়েছি। আমরা খাদ্যের নিরাপত্তার সাথে সাথে এখন পুষ্টি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এভাবে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি যেটা আমাদের সংবিধানে রয়েছে, সেটা পূরণ করার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ কিন্তু হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

করোনাভাইরাসের মধ্যেও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

তিনি বলেন, আপনারা যারা এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ। কারণ আপনারা সকলে আপনাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর ২৫ শে মার্চ আমরা এই পুরস্কারটা দিয়ে থাকি। কিন্তু এবারে ওই মার্চ মাসে এমনভাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেল; তখন বাধ্য হয়ে আমরা সব অনুষ্ঠান স্থগিত করলাম। এমনকি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর যে অনুষ্ঠান ১৭ মার্চ ব্যাপকহারে করার কথা ছিল, সেটাও আমরা লোকসমাগম না করে ভার্চুয়াল করতে বাধ্য হলাম।

‘কারণ প্রত্যেকটা মানুষ যখন একটা সমাজের জন্য, একটি জাতির জন্য একটি দেশের জন্য অবদান রাখে, তাদের একটা সম্মান করা, গুণীজনের সম্মান করা, এটা আমি মনে করি আমাদের কর্তব্য’।

আমি শুধু এই টুকু বলবো, দোয়া করবেন যেন আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আর করোনাভাইরাসের হাত থেকে আমাদের দেশে-প্রবাসে যারা আছে বা সারাবিশ্বই যেন মুক্তি পায়। আর আমাদের সকলকে অনুরোধ করবো- স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে। আবার নতুন ভাবে এই প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে ইউরোপে ব্যাপকভাবে এবং ইউরোপে যখন আসে এই ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসে। কিন্তু আমরা এখন থেকে প্রস্তুত, আমরা এখন থেকে তৈরি হচ্ছি। বিভিন্নভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালকে আমরা প্রস্তুত রাখছি।

দেশের জনগণের কাছে দোয়া কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারাও দোয়া করেন, যেন জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ যেন আমরা গড়তে পারি।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল।