শীতের আগমনী বার্তা শিবগঞ্জে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা

183

রশিদুর রহমান রানা শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি:
ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা আর সকালের কুয়াশা জানান দিচ্ছে আগাম শীতের। শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে বগুড়ার শিবগঞ্জে লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী কারিগরদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। উপজেলার লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তাদের পাশাপাশি ক্রেতা সামলাতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পরেছে ব্যবসায়ীরাও।
শীত জেকে বসার আগেই লেপ-তোষক তৈরির ধুম লেগেছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে। ফলে লেপ-তোষকের দোকানে বাড়ছে বেচা-কেনা। এসব দোকানের কর্মচারীদের এখন অলস সময় কাটানোর একদম ফুরসত নেই। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লাতে লেপ-তোষক তৈরির কারিগররা এখন হাঁক-ডাক করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্রেতাদের বাড়ি।
দিন যতই গড়াচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বেশি বাড়ার আশংকায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি। তুলা পিটিয়ে তা রঙ বেরঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কাভারে মুড়িয়ে সুই-সুতার ফোড়ে তৈরি করা হয় লেপ। খুব দ্রুত শীত নিবারণে উপযোগী এটি। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক তৈরি ও বিক্রি হয় বেশি। মাত্র ২-৩ মাসের শীত মৌসুমে উপজেলার অর্ধশত দক্ষ কারিগর লেপ-তোষক তৈরি করে পারিশ্রমিকের সঞ্চয় দিয়ে সারাবছর সংসার চালান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লেপ-তোষকের দোকানের প্রায় সবকটিতেই ছিল অর্ডার দিতে আসা ক্রেতাদের ভিড়। দোকানিরাও অর্ডার গ্রহণ এবং বিভিন্ন রঙের ও মানের কাপড় ও তুলা দেখাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রত্যেক বছর শীতের শুরু থেকে ক্রেতারা লেপ তোষকের দোকানে আসতে থাকেন। শীতের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। বছরের প্রায় আট মাস অলস সময় কাটে কারিগরদের। এসময় কেউ কেউ ব্যস্ত হন ভিন্ন পেশায়। তবে, শীত মৌসুমের শুরুতেই আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। এবার লেপ-তোষকের আগাম কেনাবেচায় খুশি উপজেলার ব্যবসায়ীরা।
এ বছর লেপের দাম কেমন হবে জানতে চাইলে মোকামতলা বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, রেডিমেড লেপ কিনতে খরচ পড়বে- সিঙ্গেল লেপ আট’শ থেকে এক হাজার টাকা, সেমি-ডবল লেপ ১ হাজার ২ শ’ থেকে এক হাজার পাঁচ’শ টাকা, ডবল লেপ পাওয়া যাবে আঠার’শ খেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
শিবগঞ্জ সদরের চিকাদহ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল কুটুল বলেন, প্রতিটি লেপ-তোষক বানাতে মজুরি হিসেবে দুইশত টাকা করে খরচ হয়। একজন কারিগর ভালো করে তৈরী করলে দিনে ২টি লেপ তৈরী করতে পারে। প্রতিটি ৪-৫ হাত লেপ ১ হাজার ২শত টাকা, তোষক ১ হাজার ৩ শত এবং জাজিম ৩ হাজার ৮ শত থেকে ৪ হাজার ২ শত টাকা পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করা যায়। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক বিক্রি বেশি হয়।
উপজেলার বানাইল গ্রামের ময়না আক্তার বলেন, ঠান্ডা একটু একটু বাড়ছে, তাই পুরাতন লেপের তুলা বদলিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে সেলাই করে নিচ্ছি। ঠান্ডা বাড়লে দোকানে ভিড় হবে। তাই ঝামেলা এড়াতে আগে বাগেই লেপ-তোষক বানাচ্ছি।
এদিকে বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম থাকায় এর চাহিদা অনেক বেশি তাই বেশি আয়ের আশায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে এ উপজেলার লেপ-তোষক তৈরীর কারিগররা।