মালয়েশিয়া থেকে আনা মাদক ‘আইস’ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৬

241

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত ৬০০ গ্রাম ব্যয়বহুল মাদক ‘আইস’ উদ্ধারসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা রমনা বিভাগের একটি বিশেষ টিম। আটক মাদকের বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা। ইয়াবার চেয়ে ১০০ গুন বেশি ক্ষতিকারক ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এই মাদক। রাজধানীর গেণ্ডারিয়া, গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান।

 

গেন্ডারিয়া এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন রায়। এ ব্যবসার আড়ালে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে দেশে ‘অভিজাতদের মাদক’ আইসের বাজার তৈরির চেষ্টা করছিলেন। দেশে নতুন পরিচিত এ মাদকদ্রব্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম প্রায় ১ লাখ টাকা। প্রতিবার লবণ বা চিনির মত দুই-তিনটি ক্ষুদ্র পরিমাণ দানা গ্রহণ করতে খরচ হয় অন্তত প্রায় ১২-১৪ হাজার টাকা।

চন্দন রায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গুলশান, বনানী ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে (৪ অক্টোবর) আরো পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়। আটককৃত অন্য পাঁচজন হলেন- সিরাজ (৫২), অভি (৪৮), জুয়েল (৫০), রুবায়েত (৩০) ও ক্যানি (৩৬)। তারা নতুন এই মাদক বিক্রয়, সেবন ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত।

এ বিষয়ে কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আইস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন মাদক। যা সেবু, ক্রিস্টাল ম্যাথ, ডি ম্যাথসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি ক্ষুদ্র দানাদার জাতীয় মাদক যা ক্রিস্টাল আকারে দেশে আনা হয়। আইসের কেমিক্যাল নাম মেথান ফিটামিন যার উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চায়না।

নতুন এই মাদক গ্রহণে ইয়াবার চেয়েও ৫০-১০০ গুণ বেশি উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এটি মূলত স্নায়ু উত্তেজক মাদক, যা গ্রহণের ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হরমোনের উত্তেজনা ১ হাজার গুন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটির তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ধীরে ধীরে দাঁতও ক্ষয়ে যায়। এছাড়া, এটি গ্রহণে স্থায়ী হেলোসিনেশন সৃষ্টি হয়।

আইস ধূমপান আকারে, ইনজেক্ট করে এবং ট্যাবলেট হিসেবে তিনটি ফরমেশনে গ্রহণ করা যায়। তবে বাংলাদেশে ধূমপান আকারে ব্যবহারের বিষয়টি দেখা গেছে। এক্ষেত্রে কাঁচের পাইপের দ্বারা তৈরি বিশেষ পাত্র ‘বং’ ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, এই চক্রের মূলহোতা চন্দন রায় তার প্রবাসী আত্মীয় শংকর বিশ্বাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাগেজে করে বিমানযোগে দেশে আনতেন এটি। আইসের মূল বাজার মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি। মাত্র ২-৩টি কণার মাধ্যমে একবার এই মাদক গ্রহণ করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। তাই নিম্ন বা মধ্যবিত্তদের পক্ষে এটি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। উচ্চবিত্তদের বিভিন্ন পার্টি বা উচ্চবিত্ত সন্তানদের টার্গেট করে আইসের বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছিলো এই চক্রটি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চন্দন রায় পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে তিনি নতুন এই মাদক আমদানি করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পরিচিত করছিলেন। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি, মাদকের উৎস, আনার প্রক্রিয়া, অর্থায়ন এবং দেশের অন্যান্য চক্রের বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন রায়ের বিষয়েও তদন্ত চলছে।