হাসপাতালে মারধরে এএসপি’র মৃত্যু

258

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক: মানসিক সমস্যার কারণে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারধর করে তাকে মেরে ফেলেছেন। হাসপাতালের সিসিক্যামেরার ফুটেজেও ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হাসপাতালের ব্যবস্থাপকসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আনিসুলের এমন মৃত্যুতে পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মী পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেক সহকর্মীই তাকে নিয়ে ফেসবুকে দিয়েছেন আবেগঘন স্ট্যাটাস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃখল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তা আনসিুলকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে এএসপি হিসেবে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক। ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র। তার ভাই রেজাউল করিম জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে তার ভাই মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা তাকে নিয়ে মাইন্ড এইড হাসপাতালে যান। কাউন্টারে যখন ভর্তির ফরম পূরণ করছিলেন, তখন কয়েকজন কর্মচারী তাকে দোতলায় নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর তাদের জানানো হয়, আনিসুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। এর পর তাকে দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই হাসপাতাল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিমকে টানাহেঁচড়া করে একটি কক্ষে ঢোকানো হয়। তাকে হাসপাতালের ছয়জন কর্মচারী মিলে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরও দুজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরেন। এ সময় মাথার দিকে থাকা দুজন কর্মচারী হাতের কনুই দিয়ে তাকে আঘাত করছিলেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি নীল কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুলের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর আনিসুলকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই তার শরীর নিস্তেজ ছিল। একজন কর্মচারী তখন তার মুখে পানি ছিটান। তাতেও আনিসুল করিম নড়াচড়া করছিলেন না। তখন কর্মচারীরা কক্ষের মেঝে পরিষ্কার করেন। সাত মিনিট পর সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নারী কক্ষে প্রবেশ করেন। ১১ মিনিটের মাথায় কক্ষের দরজা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ১৩ মিনিটের মাথায় তার বুকে পাম্প করেন সাদা অ্যাপ্রোন পরা নারী।
রেজাউল করিম বলেন, তার ভাইয়ের রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। কিছুটা হৃদরোগও ছিল। কিন্তু এ দুটির কোনোটিই প্রকট ছিল না। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটুনিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মিয়া বলেন, হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রট ডেড’ অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই আনিসুলের মৃত্যু হয়েছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে বলেন, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। আনিসুলের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কী ঘটেছিল, তা জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে।
মাইন্ড এইড হাসপাতালের সমন্বয়ক মো. ইমরান খান বলেন, আনিসুল হককে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট থেকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি খুব উচ্ছৃখল আচরণ করছিলেন। একে–ওকে মারধর করছিলেন। তাকে শান্ত করার জন্য ওই কক্ষটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে মারধর করা হয়েছিল, কেন মারা হলো এ প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, তিনি তখন হাসপাতালে ছিলেন না। ময়নাতদন্তেই জানা যাবে কীভাবে মৃত্যু হয়েছে।