করোনায় দাম্পত্য জীবনে ফিরেছে প্রেম, কমেছে বিচ্ছেদ

235

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

মানুষের চোখের ঘুম করোনাভাইরাস কেড়ে নিলেও ফিরিয়ে দিয়েছে মানুষের সুখ। জীবন-জীবিকা ওলট-পালট হয়ে গেলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দাম্পত্য জীবনে। পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-সন্তান একসঙ্গে সময় কাটাতে পারছে আগের চেয়ে বেশি। এতে ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য বা ভুল বোঝাবুঝি কমে আসছে। সহনশীলতা ও আন্তরিকতা বেড়েছে। আর কমে এসেছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় লকডাউন থেকে বেরিয়ে দাম্পত্য জীবন ও সংসারে মনোনিবেশ বেশির ভাগ মানুষ। অনেকে বিবাহ বিষয়টিকে আজকাল উড়িয়ে দেন নব্যপ্রজন্ম। বিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান। এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধিতাই এ কালের জীবনধর্ম, প্রকারান্তরে সংসারধর্মও। কিন্তু সব দেশে দেখিয়ে দিল, বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটি মরেনি। শুধু মরেনিই নয়, তা একেবারে রমরম করে চলছে।

লকডাউনে ঘরবন্দি থাকাটা একটা অভিশাপ বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, দেশে বোধ হয় এ বার বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়বে। কেননা, ২৪ ঘণ্টা এক মুখ দেখতে-দেখতে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ক্লান্ত হবেন, খিটিমিটি বাড়বে, টেনশন তৈরি হবে, তিক্ততা জেগে উঠবে।

বাস্তবের ফলাফল কিন্তু অন্য কথা বলল। জানা গেল, দম্পতিরা বেশ খুশিই হয়েছেন এই লকডাউনে। বেশিরভাগ দম্পতিই জানিয়েছেন, লকডাউন-পর্বে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। মনোমালিন্যও যে হয়নি, তা নয়, তবে সেটা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।

সমীক্ষা মোতাবেকে, বিবাহিতদের দাম্পত্য যে শুধু দৃঢ় হয়েছে তা নয়, লকডাউনের পর বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাও যথেষ্ট কমেছে। লকডাউনের আগে যারা বিবাহবিচ্ছেদ করবেন বলে ভেবেছিলেন, তারাও যে সিদ্ধান্ত পালটেছেন, সেটাও বেশ বোঝা যাচ্ছে। করোনাকালে অভূতপূর্ব বিরুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়েই দাম্পত্যের ফাটলগুলো জুড়ে গিয়েছে বলে ধারণা। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ঘরের কাজ করেছেন, রান্না করেছেন, ছেলেমেয়েদের অনলাইন পড়াশোনার দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছেন।

সমাজবিজ্ঞানীর মতে, করোনাকালে বিয়ের পরিমাণ যেমন কমে গেছে, তেমনি তালাকের সংখ্যাও কমে গেছে। করোনার এমন সময়ে একসঙ্গে বাসায় থাকা, কাজ ভাগ করে নেওয়া, সন্তানদের সাথে একত্রে থাকা – এসব স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঘনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি গৃহস্থালি কাজেও স্বামী তার স্ত্রীকে সহায়তা করছেন। এসব কাজও যে পরিশ্রমের, এরও যে একটি মর্যাদা রয়েছে – এটি স্বামীরাও বুঝতে পারছেন। পরিবারের বন্ধনটা এতে শক্তিশালী হচ্ছে। ফলে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতাও কমছে।

করোনাকালে ঘরে থাকার কারণে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই দীর্ঘদিন পর বেশি সময় নিয়ে নিজেদের বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারছেন। এতে করে মনের দূরত্ব বা ভুল বুঝাবুঝি কমে আসছে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এসব কারণে বিচ্ছেদও কমে আসছে। আর পরিবারে শান্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে যেটা সন্তানদের মধ্যেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে সাহায্য করছে।