অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই

119

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

৪০ দিন ধরে লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

বাংলা চলচ্চিত্রে একটা যুগের অবসান। টলিগঞ্জের মহীরুহ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই। ক্ষীরদা সমস্ত ফাইটিং স্পিরিট দিয়ে লড়েছিলেন গত ৪০ দিন ধরে, তবে শেষমেষ হেরে গেলেন। আজ দুপুর ১২.১৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

উত্তম সমসাময়িক যুগেও বাঙালির মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন সৌমিত্র। ছয় দশক দীর্ঘ তার চলচ্চিত্র জীবন। অভিনয় ছিল তার জীবনের অক্সিজেন, বলতেন- ‘আমি অভিনয় করছি বলেই তো সুস্থ আছি’। তাই তো করোনা সতর্কাতার মাঝে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। লডকাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছেন নিজের বায়োপিক ‘অভিযান’-এর শ্যুটিং। কাজ করেছেন একটি ডকুমেন্ট্রি ফিল্মেরও। কারণ সৌমিত্র বলতেন, ‘কাজ ছাড়া আমি আর কিচ্ছু করতে চাই না’।

১৯৩৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে জন্ম সৌমিত্রবাবুর। বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টের উকিল ছিলেন। তবে নাটকের চর্চা নিয়মিত ছিল পরিবারে,বাবা নাটকের দলে অভিনয় করতেন। ছোট থেকেই সেই পরিবেশে বড় হওয়া তার। তখন থেকেই অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান সৌমিত্র। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স(বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অভিনেতার রুপোলি সফর শুরু হয়, ১৯৫৯ সালে। ছবির নাম অপুর সংসার, যা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত্ রায়। সেই পথচলা শুরু এই জুটির। সত্যজিত পরিচালিত ৩৪টি ছবির ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, যা বিরল প্রাপ্তি।

তবে শুধু সত্যজিত রায় নন, তপন সিনহা, মৃণাল সেন,তরুণ মজুমদার থেকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়,অতনু ঘোষ, সুমন ঘোষের মতো আজকের প্রজন্মের পরিচালকদের ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬১ বছর দীর্ঘ ফিল্মি কেরিয়ারে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র।

শুক্রবার থেকে সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটতে থাকে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। বাড়তে থাকে স্নায়বিক সমস্যাও। প্রবল ভাবে ওঠানামা করতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। শনিবার বিকেলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব। ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি প্রয়াত হন। বেলভিউ সূত্রে এ খবর জানানো হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর কোভিড আক্রান্ত হয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন সৌমিত্র। তিন দিনের মধ্যেই অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইটিইউয়ে রাখতে হয়েছিল। ১৫ অক্টোবর কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। ক্রমশ অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল। কিন্তু অন্যান্য বহু শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন প্রবীণ তারকা। বস্তুত, তিনি একটা সময়ে ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই অসুস্থতা স্বভাবতই তাঁকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। ফলে কখনও উন্নতি কখনও অবনতি, এই দোলাচলেই চলছিল হাসপাতাল-বন্দি সৌমিত্রর জীবন।