বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন যে, সশস্ত্র বাহিনী দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ
সরকার প্রধান আরও বলেন, করোনাকালে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানাবিধ কার্যক্রমও অত্যন্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারদের মানবিক সহায়তা প্রদানে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছে।
মালদ্বীপের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রদত্ত চিকিৎসা সামগ্রী নৌবাহিনীর জাহাজ যোগে সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়াও জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বিজয়’ লেবাননের বৈরুতে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে।
আর্ত মানবতার সেবায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন,আমাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিশিষ্টজনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেছে। আটকে পড়া দেশি-বিদেশি নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপে প্রেরণ এবং লেবাননে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করছেন।
তিনি যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং অসুস্থদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে এবং আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করতে সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইএফএফ প্রস্তুতকরণ প্রকল্প, মাইন-টর্পেডো ডেভেলপমেন্ট, গান ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দ্বারা উন্নত প্রযুক্তির সফট্ওয়্যার তৈরি করে সাইবার নিরাপত্তা ও নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক ওয়ারফেয়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘এ বছর জাতিসংঘের ৭৫তম বছর পূর্তিতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি।’ তিনি বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মাহুতি দানকারী শান্তিরক্ষীদেরও রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল পদবীর অফিসার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মনোনীত হয়েছেন এবং ফোর্স কমান্ডার হিসেবে একজন মেজর জেনারেল বা লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবীর অফিসার নিয়োগের কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে।
তিনি এ সময় জাতির পিতার করে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির আলোকে সকলের সঙ্গে সহাবস্থানে তাঁর দেশ বিশ^াসী উল্লেখ করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকার জন্যও সশ¯্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা প্রর্বতিত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব¡, কারও সাথে বৈরিতা নয়’ – এই মূলমন্ত্র দ্বারা আমাদের বৈদেশিক নীতিমালা পরিচালিত। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আমরা বিশ্বাসী। তবে, যে কোন আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদা-প্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’’
‘আওয়ামী লীগ সরকারই সর্বপ্রথম সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্য এবং বিমান বাহিনীতে মহিলা বিমানসেনা নিয়োগ দিয়েছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে পাঁচজন নারী সদস্য লে. কর্নেল পদে উন্নীত হয়ে সম্মুখসারির যুদ্ধের ইউনিটসমূহের ইউনিট অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসা বিদ্যা ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুন্নাহার ফাতেমা বেগমকে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক দস্বাধীনতা পদক-২০১৯’ এ ভূষিত করা হয়েছে।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সেনা আবাসন প্রকল্প, উন্নতমানের রসদ সরবরাহ এবং বহুতল সরকারি পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণ, সেনাবাহিনীর শহিদ/মৃত/অবসরপ্রাপ্ত অসহায় বিধবা পতœীদের দুস্থ ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করাসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সদস্যগণের ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদান ১২ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাসে উন্নীত করাতেও সরকারের পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
তিনি করোনাকালিন দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি বলেন,‘আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।’
‘এ মতাবস্থায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকা- এগিয়ে নিতে হবে,’যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি পুনরায় দৃঢ় কন্ঠে উচ্চারণ করেন,‘আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবোই, ইনশাআল্লাহ।’