রেমিটেন্সের প্রণোদনা পাওয়া আরও সহজ হল

150

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখায় রেমিটেন্সে সরকার ২ শতাংশ হারে যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তা পাওয়া আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিদেশে কর্মরত এই শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি

মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীরা বেশি অর্থ পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখায় রেমিটেন্সে সরকার ২ শতাংশ হারে যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তা পাওয়া আরও সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখন থেকে রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্র নিজ দায়িত্বেই যাচাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকের কাছে ‘কনফার্মেশন’ পাঠাবে।
তার ভিত্তিতে রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর প্রণোদনার টাকা ছাড় করবে।
এতদিন রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্র যাচাই করত। রেমিটার যার নামে রেমিটেন্স পাঠাতেন, তিনি প্রথমে রেমিটারের কাগজপত্র রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংকে জমা দিতেন। রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক ওই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার জন্য রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকে পাঠাত। আহরণকারী ব্যাংক সেগুলো পরীক্ষা করে প্রদানকারী ব্যাংকে কনফার্মেশন দেওয়ার পর প্রণোদনার টাকা পেতেন সুবিধাভোগীরা।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় লেগে যেত। সেই সময় কমিয়ে এনে রেমিটেন্সের প্রণোদনার টাকা যাতে দ্রুততর সময়ে সুবিধাভোগীরা পান, তা নিশ্চিত করতে বুধবার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স প্রেরণের বিপরীতে প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ প্রণোদনা সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে রেমিটারের কাগজপত্রাদি বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্দেশনায় সেই যাচাই পদ্ধতি সহজ করে বলা হয়েছে-
>> ২ শতাংশ প্রণোদনা সহায়তা গ্রহণের জন্য প্রাপক তার ব্যাংক (প্রদানকারী ব্যাংক) শাখায় রেমিটারের কাগজপত্রা জমা দেবে।
>> রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্রা নিজ দায়িত্বে যাচাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণোদনা সহায়তা ছাড়করণের জন্য রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংকের নিকট কনফার্মেশন প্রেরণ করবে।
>> ওই কনফার্মেশনের ভিত্তিতে রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর প্রণোদনা সহায়তা ছাড় করবে।
>> রেমিটেন্স আহরণকারী এবং প্রদানকারী ব্যাংক একই হলে রেমিটেন্সের প্রাপক হতে রেমিটারের কাগজপত্র সংগ্রহ এবং ওই কাগজপত্র যাচাই রেমিটেন্স আহরণকারী ব্যাংক নিজেই সম্পাদন করবে।
>> এ নির্দেশনা ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর ধরা হবে।
নভেম্বরে রেমিটেন্স বেড়েছে ৩৩%
বিশ্ব ব্যাংকের চোখে রেমিটেন্স বেড়েছে যেসব কারণে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী।
তবে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার কম রেমিটেন্স পাঠালে প্রণোদনার জন্য কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হয় না।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর এই কঠিন সময়েও রেমিটেন্সে যে উল্লম্ফন হচ্ছে, তাতে এই ২ শতাংশ নগদ সহায়তা অবদান রাখছে।
“প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের সঙ্গে সরকারের প্রণোদনার টাকাও যেন সুবিধাভোগীরা দ্রুততর সময়ের মধ্যে পান, সেজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এতে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল।
মহামারীকালেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসেও ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সবমিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এক হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ (১০.৯০ বিলিয়ন) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে পাঁচ মাসে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে এত বেশি প্রবৃদ্ধি আগে কখনই হয়নি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৭৭১ কোটি ৬২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন তারা। আর পুরো বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে গত অর্থবছরের ৬০ শতাংশ রেমিটেন্স এই পাঁচ মাসেই চলে এসেছে।

সুত্র অনলাইন