ভাস্কর্য ভাঙার কথা স্বীকার করে যা বলেছে দুই যুবক

193

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় সিসিটিভি’র ফুটেজ দেখে দুই মাদ্রাসা ছাত্র এবং মাদ্রাসা থেকে পালাতে সহযোগিতা করায় মাদ্রাসার ২জন শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় সাংবাদিক সম্মেলনে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন এখবর জানান। ভাস্কর্য ভাঙার কাজে জড়িত ছাত্ররা হলো শহরতলী জুগিয়া পশ্চিম পাড়া মাদ্রাসা ই ইবনে মাস্উদ (রাঃ) কওমী মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বক্কর ওরফে মিঠন(১৯) ও সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ(২০)। মিঠনের বাড়ি মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামে এবং নাহিদের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর হোগলবাড়িয়া গ্রামে। গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসা শিক্ষক আল আমিন(২৭)। বাড়ি মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামে অপর শিক্ষক ইউসুফ আলী(২৬) বাড়ি পাবনা জেলার আমিনপুর উপজেলার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামে।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি সাংবাদিকদের জানান-ঘটনার ২৩ ঘন্টা পর হলেও মাত্র ১২/১৩ঘন্টায় জেরা পুলিশের কর্মকর্তা এবং সদস্যদেও আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় সিসি ফুটেজ দেখে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের সনাক্ত করা হয়।

তিনি জানান, জেলা পুলিশ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে জুগিয়া পশ্চিম পাড়ায় অবিস্থত মাদ্রাসা ই ইবনে মাসউদ এর জামাত বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমানকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ফুটেজ দেখালে তারা তথ্য দেয় যে, এরা এই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। পরে ওই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে হানা দিয়ে শনিবার রাতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের পর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারা জানায়, মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও মাওলানা ফয়জুল করিমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা পুলিশকে জানান, ৫ডিসেম্বর রাতে মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থী ঘুমিয়ে পড়লে তারা দুজন গোপনে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে শাহিন কাউন্সিলারের বাড়ির পাশ দিয়ে কানাবিলের মোড় পাড় হয়। এর পর কমলাপুর দিয়ে রেল লাইন দিয়ে ফজলুল উলুম মাদ্রাসার পাশ দিয়ে ৫রাস্তা মোড়ে ভাস্কর্যের কাছে আসে।

রাত ২টা ৫ মিনিট থেকে ২টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত মাত্র ৮ মিনিটে বাঁশের চড়াতে ওই ভাস্কর্যে উঠে তাদের সাথে থাকা হাতুড়ি দিয়ে নির্মানাধীন ভাস্কর্যে স্বজোড়ে আঘাত করে। এতে হাত ও মুখের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে ফেলে এবং বিকৃত করে। তারা আবার পায়ে হেটে মাদ্রাসায় যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে ঘটনাটি মাদ্রাসার ২ শিক্ষক জানতে পেরে তাদের দ্রুত মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেতে বলে। ছাত্রদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মাদ্রাসার শিক্ষকদের গ্রেফতার করে।

সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত ২ ছাত্র ২ শিক্ষককে সাংবাদিকদের সম্মুখে হাজির করা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, পুলিশ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতরে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) তৎসহ ৪২৭/৩৪ পেনাল কোড রুজ্জু করা হয়েছে। তাদের পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এঘটনার সাথে আরো কোন ব্যক্তি বিশেষ ও সংগঠন জড়িত থাকলে তাদের সনাক্ত করা হবে।

ডিআইজি আরো জানান, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ ঘোলাটে পরিবেশ করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। আর এ ঘটনার পর আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জানান-ইতিমধ্যে জেলার সর্বত্র যেখানে মুর‌্যাল ও ভাস্কর্য রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।