হাই স্কোরিং ম্যাচে ইমনের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে বরিশালে ডুবলো রাজশাহী

113

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

তরুণ ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে ম্লান হয়ে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর গড়া টুর্ণামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরিটি। মিরপুরের শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ইমনের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে ভর করে ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীকে পরাজিত করেছে। এই জয়ে টুর্নামেন্টে এখনো টিকে থাকল তামিম ইকবালের দলটি।
এর আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ উইকেটে পাহাড় সমান ২২০ রান সংগ্রহ করে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। কিন্তু সেই দলটিকেই হারিয়ে পে অøফে খেলার সুযোগ জিইয়ে রাখল বরিশাল।
ম্যাচের প্রথমার্ধের পর কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি রাজশাহীকে এভাবে ছিটকে পড়তে হবে। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে বিশ^কাপ জয় করা পারভেজ হোসেন ইমন একেবারেই সাধারন ভাবেই যেন এই কাজটি সম্পন্ন করে দিয়েছেন। মাত্র ৪২ বলে অপরাজিত ১০০ রান করে ১১ বল বাকী থাকতেই বরিশালকে জয় এনে দেন তিনি। কভার অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারী হাকিয়ে নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরিটি পুর্ন করেন ইমন। একই সঙ্গে দলকেও পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
ক্যারিয়ারের প্রথম এই সেঞ্চুরির পথে ইমন নয়টি বাউন্ডারি ও সাতটি ওভার বাউন্ডারির সহায়তা নিয়েছেন। এটি ছিল কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরি। এমনকি নিজ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও ভেঙ্গে দিয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) ৫০ বলের মোকাবেলায় দ্রুততম সেঞ্চুরি হাকানোর রেকর্ডটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ৬১ বলে ১৪১ রান তুলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তামিম। এর আগে শান্ত ওই রেকর্ডটি ভাঙ্গার বেশ কাছে এসেও শেষ পর্যন্ত পারেননি। যেটিকে এখন অনেক দূরে ঠেলে দিলেন ইমন।
এই নিয়ে টুর্নামেন্টে টানা পঞ্চম ম্যাচে পরাজিত হল রাজশাহী। শুরুতে দুই ম্যাচে জয়লাভ করেছিল তারা। অবশ্য দ্বিতীয় এই জয়েও তালিকার তলানী থেকে উঠে আসতে পারেনি বরিশাল। কারণ রান রেটের দিক থেকে রাজশাহীর পেছনে পড়ে আছে বরিশাল। তবে টুর্নামেন্টে এখনো টিকে থাকতে সক্ষম হল তারা।
রাজশাহীর বড় টার্গেটের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই অবিচল ছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল। শুরুতে ওভার প্রতি ১০ রান সংগ্রহ করতে থাকেন তারা। ১৫ বলে ২৭ রান সংগ্রহের পর সাইফ আউট হয়ে গেলে তামিমের সঙ্গে দলের হাল ধরেন পারভেজ হোসেন ইমন। এবং শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি। এই সময় অধিনায়ক তামিমের চেয়ে বেশী আগ্রাসী ছিলেন ইমন। রাজশাহীর বোলারদের পাড়া মহল্লার বোলারে পরিনত করেন তিনি। এসময় তামিমের সঙ্গে ৫৩ বলে ১১৭ রানের পাটনারশীপ গড়ে তোলেন ইমন।
৫টি বাউন্ডারী ও একটি ওভার বাউন্ডাররী হাকিয়ে ৩৭ বলে ৫৩ রান করে তামিম রান আউট হবার পরও অপর প্রান্তে থেকে ব্যাটিং তান্ডব অব্যাহত রাখেন ইমন। এভাবে কোন রকম শংকাতে না রেখেই দলকে জয় এনে দেন তিনি। তার সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন আরেক উদীয়মান ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন। তিনটি বাউন্ডারি হাকিয়ে ১৬ বলে অপরাজিত ২৬ রান করেন তিনি।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করতে গিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে ভর করে ফরচুন বরিশলের বিপক্ষে ৭ উইকেটে পাহাড় সমান ২২০ রান সংগ্রহ করে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। গুরুত্বপুর্ন ওই ম্যাচে শান্ত মাত্র ৫২ বলে সেঞ্চুরি পুর্ন করেন। যেটি তখনো পর্যন্ত ছিল টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। তবে ইমন তান্ডবের পর সেঞ্চুরিটি নেমে যায় চতুর্থ স্থানে। ৫৪ বলে ১০৯ রান সংগ্রহ করে বিদায় নেয়ার আগে চারটি বাউন্ডারি ও ১১টি ওভার বাউন্ডারি হাকান শান্ত। এর মধ্য দিয়ে তিনি টি-২০ ক্রিকেটে এক ইনিংসে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ ছক্কা হাকানোর রেকর্ডেও ভাগ বসান।
শান্তর পাশাপাশি সতীর্থ তরুণ তারকা আনিসুল ইসলাম ইমনের ব্যাটিংও ছিল আগ্রাসী। সাতটি চার ও তিনটি ছয় হাকিয়ে ৩৯ বলে ৬৯ রান সংগ্রহ করেন তিনি। তারা উদ্বোধনী জুটিতে ১৩১ রান সংগ্রহ করনে। এটিই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় শতোর্ধ পার্টনারশীপ।
ফিরতি ক্যাচে সুমন খান ওপেনার ইমনকে সাজঘরে ফেরানোর পর রাজশাহীর হয়ে শান্ত ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান অবশ্য সুবিধা করতে পারেনি।শান্তর ব্যাটিংয়ের কারণেই টুর্নামেন্টের প্রথম দল হিসেবে দুই শতাধিক রানের স্কোর গড়তে সক্ষম হয় রাজশাহী।
তবে ম্যাচটিকে আরো জমজমাট করে দিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। শেষ ওভারে হ্যাট্রিক সহ প্রতিপক্ষ রাজশাহীর চারটি উইকেট একাই তুলে নিয়েছেন তিনি। যে কারণে রাজশাহীর সংগ্রহটা আর বড় হতে পারেনি। টি-২০ ক্রিকেটে কোন বাংলাদেশী বোলার হিসেবে তৃতীয় হ্যাট্রিকের স্বাদ নিলেন রাব্বি। এর আগে আল আমিন হোসেন দু’বার এবং আলিস আল ইসলাম একবার হ্যাট্রিক উইকেট লাভ করেছেন। বরিশালের হয়ে রাব্বি ৪৯ রানে চারটি এবং সুমন খান ৪৩ রানে দুটি উইকেট লাভ করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ২০ ওভারে ২২০/৭ (শান্ত ১০৯, আনিসুল ইমন ৬৯, রনি তালুকদার ১৮, নুরুল হাসান সোহান ১২, কামরুল রাব্বি ৪৯/৪, সুমন খান ৪৩/২)
ফরচুন বরিশাল ১৮.১ ওভারে ২২১/২ (পারভেজ ইমন ১০০*, তামিম ইকবাল ৫৩, সাইফ হাসান ২৭, আফিফ হোেেস ২৬*, সাইফুদ্দিন ৪০/১)
ফলাফল: বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী।