বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে পাকিস্তানের বিরোধী ১১ দলীয় জোট পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)। বিক্ষোভ থেকে রাজনীতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে সমালোচনা করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে দেয়া বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে রোববার লাহোরের এই বিক্ষোভে সমবেত হন হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, জানুয়ারিতে ইমরান খান সরকারের ওপর পদত্যাগে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টির জন্য রাজধানী ইসলামাবাদে বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে পিডিএম। এই জোটে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিও (পিপিপি)। বিক্ষোভের কারণ হিসেবে বিরোধীরা দেশে মুদ্রাস্ফীতি দুই অংকে পৌঁছে যাওয়া, নাজুক অর্থনীতি, নাগরিকদের স্বাধীনতা হরণ এবং মিডিয়ার ওপর সেন্সরশিপের অভিযোগ তোলেন।
রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে রিপোর্ট করছিলেন আল জাজিরার সাংবাদিক কামাল হায়দার।
তিনি বলেছেন, বিরোধীদের রোববারের র্যালিকে দেখা হচ্ছে একটি ‘গণভোট’ হিসেবে। কিন্তু সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তারা কোনো চাপই অনুভব করছে না। পিডিএম আগেই জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদে তাদের যত সব এমপি আছেন তাদের সবাইকে স্ব স্ব দলের প্রধানের কাছে পদত্যাগপত্র দিতে বলা হয়েছে। জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ থেকে গণপদত্যাগের মাধ্যমে তারা ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। কিন্তু ইমরানও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। উল্টো জাতীয় পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধীরা পদত্যাগ করলে শূন্য আসনে সরকার উপনির্বাচন দেবে। অর্থাৎ, এসব হুমকি ধমকিতে তিনি বিচলিত নন। তিনি বরং সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদের। বলেছেন, দুর্নীতির মামলা বাদে যেকোন ইস্যুতে তিনি আলোচনা করতে চান। তার এমন অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করেছেন পিডিএমের নেতা জেইউআইএফ নেতা মাওলানা ফজলুর রেহমান।
সাংবাদিক কামাল হায়দার বলছেন, পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সেই দিক থেকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করছে সরকার। তবে কিছু বিশ্লেষকের তথ্যমতে, পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে। ওদিকে রোববার আরেক খবর প্রকাশ পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তানের ২০০ কোটি ডলারের ঋণ আছে। সেই ঋণ পরিশোধে পাকিস্তানকে আরো ১৫০ কোটি ডলার দিয়েছে চীন। সেখান থেকে আজ সোমবার সৌদি আরবকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করার কথা। বাকি ১০০ কোটি ডলার জানুয়ারিতে পরিশোধের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৭ সালে অভিযুক্ত করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এক বছর পরে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে পাঠানো হয় জেলে। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন ইমরান খান। এরপর চিকিৎসার জন্য তিনি ২০১৯ সালের নভেম্বরে পাড়ি জমান বৃটেনে। বলা হয়, তার জীবন ঝুঁকিতে। চিকিৎসা করাতে বৃটেন যেতে হবে। কিন্তু বৃটেনে যাওয়ার কিছু দিন পরেই তিনি নির্বাসনে বসে দেশের রাজনীতিতে ঘুঁটি চালা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার জন্য তিনি সেনাবাহিনীর জেনারেল এবং বিচারকদের দায়ী করেন। লন্ডন থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তার লাহোরের বিক্ষোভে বক্তব্য রাখার কথা ছিল।