বাংলাদেশী রতনের ওভাল জয়!

117

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

২৪ ঘণ্টার জন্য ইংলিশ ক্রিকেটের প্রতীক কিআ ওভালের নাম বদলে ‘কিআ শহীদুল আলম রতন ওভাল’ রেখে সম্মাননা জানিয়েছে এক বাংলাদেশীকে। মঙ্গলবার বিশ্ববিখ্যাত দ্য ওভালের নাম এক দিনের জন্য রাখা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক কোচ রতনের নামে। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের আগের দিন এক বাংলাদেশীর এই সম্মাননায় উৎফুল্ল ক্রিকেট ভক্তরাসহ বাংলাদেশীরা।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের এক সময়ের পরিচিত মুখ, বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক কোচ শহীদুল আলম রতন। লন্ডনের ‘ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেট’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান নির্বাহী তিনি। এই সংস্থাটি ইংল্যান্ডের আরো কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে অনুদান পেয়ে থাকে। ন্যাশনাল লটারি ফাউন্ডেশন-এর কাছ থেকে তেমনি কিছু অনুদান পেয়েছিলো রতনের ‘ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেট’ প্রথম লকডাউনের আগে। আর ওই অনুদান কাজে লাগিয়ে লকডাউনের এই সময় রতন ও তার সংস্থা লন্ডন এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে বাসায় থাকা হাজারো তৃনমূল ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়ায়। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিসি) ও সাবেক ক্রিকেট ক্লাব ২৪ ঘণ্টার জন্য কিআ ওভালের নাম বদলে রতনের নাম যুক্ত করে ফেলে।

মঙ্গলবার শহীদুল আলম রতনের নাম ব্রিটেনের বাংলাদেশী পাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। আবেগে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। প্রথমে তিনি কেবল বলতে পারলেন, ‘এটি অনেক বড় সম্মান। আমি বুঝিয়ে বলতে পারছি না। এটি আসলে অনেক বড় অনার। তবে আমি বলবো, এটি আমার একার সম্মান নয়। আমি বলবো, এটি আমার একার নাম নয়। এটি বাংলাদেশের নাম। আমি আজ একজন বাংলাদেশী হিসেবে গর্বিত।’

এটি তার কোন কাজের স্বীকৃতি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে প্রথম লকডাউনের সময় কমবয়সী ক্রিকেটারদের জন্য কঠিন ছিলো। তাদের হতাশ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ছিলো। আমরা তাই ওদের জন্য বিভিন্ন ধরণের অনলাইন ক্লাস ও অনলাইন কোর্সের ব্যবস্থা করি। পরে আমরা আস্তে আস্তে ওই কোর্স লন্ডনের বাইরে, এমনকি ইংল্যান্ডের বাইরেও করার আয়োজন করি। আমাদের এই ফান্ডটা দিয়েছিলো ‘ন্যাশনাল লটারি ফাউন্ডেশন’। আমাদের কোচিং দলকে আমরা বলেছি, এমনভাবে কোচিং সেটআপ করতে, যেন যেকোনো বাসায় বসে করা সম্ভব হয়।”

রতন আরো বলেন, “এ ছাড়া লকডাউনের ওই সময়ে সুবিধাবঞ্চিত ও উদ্বাস্তু শিশুদের জন্য কাজ করেছে তার ‘ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেট’। তাদের জন্য কোর্স করার পাশাপাশি তাদের নানারকম ক্রিকেট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন, লেবাননে যেসব সুবিধাবঞ্চিত ক্রিকেটার ওই সুবিধা পেয়েছে তাদের ১৩০টি পরিবারকে নিয়ে জুমে কনফারেন্সের আয়োজন করে ‘ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেট’। ওসব কাজের জন্যই ইংল্যান্ড সরকারের ওই সংস্থাটি তাদের তহবিল পাওয়া কয়েক হাজার সংস্থার ভেতর থেকে ছয়জন স্বেচ্ছাসেবীকে বেছে নেয়। ছয়টি ক্রীড়া স্থাপনার সাথে তারা চুক্তি করে, ওই ছয়জনকে সম্মান জানাতে স্থাপনাগুলোর নাম ২৪ ঘণ্টার জন্য বদলে ফেলা হবে। তারই ফল হিসেবে এই কিআ ওভালের নামকরণ।”

শহীদুল আলম রতনের ক্রিকেট জীবন
ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। খেলেছেন ওয়ারী থেকে মোহামেডান; নিয়মিত ঢাকার ক্রিকেট। এমসিসির হয়ে আন অফিশিয়াল বাংলাদেশ জাতীয় দলেও খেলেছেন। তবে অল্প বয়সেই নব্বই দশকের মাঝামাঝি ক্রিকেট ছেড়ে দ্রুতই কোচিংয়ে চলে আসেন। ইংল্যান্ড থেকেই কোচেস কোর্স লেভেল থ্রি সম্পন্ন করেন। এর মধ্যেই দেশে ক্লাব ক্রিকেটে কোচিং শুরু করে দেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে চাকরি নেন তরুণ কোচ হিসেবে। সেখানে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের সাথে কাজ করেন তিনি। রিচার্ড ম্যাকিন্সের বিখ্যাত অনুর্ধ্ব-১৯ দলের সেটআপ ও হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কোচও ছিলেন রতন।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চাকরি ছেড়ে চলে যান মালয়েশিয়াতে। সেখানে মালয়েশিয়া যুব দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপেও কাজ করেছেন। আর মালয়েশিয়া থেকেই তাকে লন্ডনে নিয়ে যায় ‘ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেট’। শুরুতে তাদের গেম ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা ও কোচ হিসেবে কাজ করলেও গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন প্রধান নির্বাহী হিসেবে।

ক্যাপিটাল কিড ক্রিকেটের দায়িত্ব নিয়ে রতন ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন ইংল্যান্ডের তৃনমূল পর্যায়ে। নিজেদের কাজ সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমরা ‘সারে’ ও ‘মিডলসেক্স’ সহ বিভিন্ন কাউন্টি ক্লাবের সাথে কাজ করি। মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্রিকেটের সাথে রাখার জন্য অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করি আমরা।’’ ওই কাজটিই তারা জোরদার করলেন লকডাউনের সময়। রতনের এই কর্মকাণ্ডের বিপুল প্রশংসা করেছেন ইংল্যান্ডের ক্রীড়া বিভাগ।