শুভ জন্মদিন আফসানা মিমি

103

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

অভিনয়ের আঙ্গিনায় প্রিয়মুখ আফসানা মিমি। মডেল, অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা ও পরিচালক হিসেবে তিনি সবার কাছে জনপ্রিয়। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বকুল চরিত্র দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। সেই নাটকে তার মুখে ‘কেন কেউ বুঝতে চায় না আমি বড় হয়েছি’ সংলাপটি ঘুরতো মানুষের বিশেষ করে কিশোরীদের মুখে মুখে।

মিষ্টি হাসির এই অভিনেত্রীর আজ জন্মদিন। এবারে ৫২ বছরে পা রাখলেন মিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভক্ত শোভাকাঙ্খিরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।

জন্মদিনের প্রথম প্রহরটা কেমন কেটেছে এ প্রসঙ্গে আফসানা মিমির মিষ্টি হেসে জবাব, ‘ঘুমিয়েছি। এক ঘুমে রাত পার। তবে সকালে উঠে মনটা আনন্দে ভরে গেল। দেখলাম অসংখ্য ম্যাসেজ এসেছে জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। দিনভর চেষ্টা করবো তাদের উত্তর দিতে।

সেইসঙ্গে সকালে প্রথম কল পেয়েছি কানাডা থেকে। প্রিয় বেলি আপা (অভিনেত্রী আফরোজা বানু) ও মহসিন রেজা ভাই। এই দম্পতি কল দিয়ে শুভেচ্ছা দিয়েছেন, দোয়া করে দিলেন। দেখুন এই মানুষগুলোই আমার প্রিয়জন। এই শোবিজে কাজ করতে করতে অনেক কাছের মানুষ পেয়েছি যাদের স্নেহ-ভালোবাসা গর্বিত করেছে আমাকে। তাদের মধ্যে সুবর্ণা আপা (সুবর্ণা মুস্তাফা), আসাদুজ্জামান নূর ভাই আছেন। তারা ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা দিলেন।’

জন্মদিনে বিশেষ কোনা পরিকল্পনা নেই জানিয়ে মিমি বলেন, ‘আর দশটা দিনের মতো কেটে যায় জন্মদিন। কাজ থাকলে কাজ করি। নইলে বাসাতেই। যা কিছু পরিকল্পনা হয় তা একান্তই ব্যক্তিগত কিছু আয়োজন। যেমন বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো।

তবে এবারের জন্মদিনজুড়ে বেদনা লেগে আছে। করোনার জন্য এবার অনেক প্রিয়জনকে হারিয়েছি আমি। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ আমার খালু মারা গেছেন। কিছুদিন আগে শ্রদ্ধেয় আলী যাকের মারা গেলেন। আমার অতি প্রিয়দের একজন। আমার গুরু। গেল কয়েকদিন ধরে আব্দুল কাদের ভাই হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। এত শোক-বেদনা নিয়ে মনে জন্মদিনের আনন্দ আসে না।

তবু জীবন গতিশীল বলে একটা কথা আছে না, সেজন্যই হয়তো শুভেচ্ছা পাচ্ছি। কাছের মানুষরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মুরুব্বীরা ফোন করে দোয়া দিচ্ছেন। এটুকুই জন্মদিন এখন।’

‘যে দর্শকের জন্য আমি আজকের আফসানা মিমি তাদের জন্য ভালোবাসা রইলো। তাদের জন্য বলতে চাই, অনেক সংকটের মধ্যেই মানুষকে দিন পার করতে হয়। ব্যক্তিগত সংকট, অর্থনৈতিক সংকট। এই করোনা মহামারি হয়তো সেইসব সংকটগুলোকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তবু যেন আমরা ধৈর্য্য ধরতে পারি। মনুষত্বটুকু যেন না হারাই। নিজের অস্থিরতা, সংকটের জন্য অন্যের জীবনকে যেন অস্থির না করে তুলি, সংকটে না ফেলি। চেষ্টা করা যাক সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে সব সংকট মোকাবিলা করা যায় কি না’- দর্শকের কাছে দোয়া চেয়ে বললেন মিমি।

এদিকে অনেক দিন থেকেই অভিনয়ে তেমন দেখা যায় না মিমিকে। তবে মাঝে মধ্যে উপস্থাপনায় দেখা দেন। সর্বশেষ তিনি গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপপূণ্য’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এতে আরও অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, মামুনুর রশীদ, গাউসুল আলম শাওন, ফারজানা চুমকি প্রমুখ। ১০ বছর পর এই সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় ফিরতে চলেছেন মিমি। এটি রয়েছে মুুক্তির অপেক্ষায়।

সেইসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আফসানা মিমি। তার এই দায়িত্বপ্রাপ্তি মঞ্চ ও টিভি মিডিয়ার মানুষদের মনে আনন্দের বৃষ্টি ঝরিয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো মিমিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, আফসানা মিমির জন্ম ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর। বাবার নাম সৈয়দ ফজলুল করিম। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন। মা শিরীন আফরোজ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই অভিনেত্রী পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

নব্বই দশকে মিমির অভিনয়ের অভিষেক হয়েছিল বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে। অভিনেতা ও নির্দেশক সৈয়দ মাহিদুল ইসলামের ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে অংশ নেন ‘রাজদর্শন’ নাটকে। মনোজ মিত্রের লেখা সেই নাটকে তিনি রানির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তখন তার বয়স ১৮। তারপর থেকে নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে মঞ্চে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন।

গাজী রাকায়েতের হাত ধরে পরবর্তীকালে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন। নাগরিকের হয়ে প্রথম মঞ্চে উঠেছিলেন শেক্সপীয়রের ‘হ্যামলেট’ অবলম্বনে আলী যাকেরের রচনা ও নির্দেশনায় ‘দর্পণ’ নাটকের কোরাস দলের একজন হয়ে। পরে অভিনয় করেন ‘নূরুলদীনের সারাজীবন’, ‘দর্পণে শরৎশশী’, ‘ঈর্ষা’ প্রভৃতি নাটকে।

সেই সূত্র ধরেই টিভিতে প্রবেশ। ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘বন্ধন’, ‘ডল’স হাউজ’, ‘কাছের মানুষ’ ইত্যাদি নাটকে মিমির অভিনয় উজ্জ্বল হয়ে আছে।

তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৯২ সালে আজিজুর রহমানের ‘দিল’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার। তারপর ‘নদীর নাম মধুমতি (১৯৯৪)’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে (১৯৯৯)’, ‘প্রিয়তমেষু (২০০৯)’ ছবিগুলোতে তার দেখা মিলেছে।

আফসানা মিমি নির্মাতা হিসেবেও আলাদাভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। তার পরিচালনায় ‘পৌষ ফাগুনের পালা’ ধারাবাহিক নাটকটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায় এটিএন বাংলায় প্রচার হলে। তিনি ‘মনের কথা’ নামের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।