পরীক্ষার আগে বিনা দোষে মালয়েশিয়ায় কারাবাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর

127

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ায় ‘অবিচারের’ শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মোহাম্মদ আশরাফুল গনি নামের ওই শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ছিল। ভিসা নবায়নের জন্য তিনি জমা দিয়েছিলেন। রেস্টুরেন্টে পুলিশকে সে বিষয়ে অবহিত করেও ছাড় পাননি তিনি। পরীক্ষার আগে প্রায় একমাস কাটাতে হয়েছে জেলে!

আশরাফুলের বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ায় এখন বেশ আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয়রা তাকে সমর্থন জানিয়ে প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ জানাচ্ছেন।

মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা থেকে শুরু করে কয়েকটি বেসরকারি গণমাধ্যমেও বিষয়টি এসেছে।

জানতে পেরেছে, আশরাফুল ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার ইনোভেটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে পড়ালেখা করেন। ২০১৮ সালে এই অধ্যায় শেষ করে পরের বছর ভর্তি হন সিটি ইউনিভার্সিটিতে। ইনফরমেশন টেকনোলজির ওপর এখানে ব্যাচেলর ডিগ্রি করছেন।

মালয়েশিয়ায় এর আগে রায়হান কবির নামের আরেক বাংলাদেশি হেনস্তার শিকার হন। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার একটি প্রমাণ্যচিত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার বর্ণানা দিয়ে গ্রেপ্তার হন তিনি। কয়েক দফার রিমান্ড শেষে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

আশরাফুলের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।

তার বন্ধুরা বিষয়টি জানার পর আদালতে পাসপোর্ট জমা দেন। পরে জামিন দেয়া হয়। সেই জামিনের বিরুদ্ধে পুলিশ আবার চ্যালেঞ্জ করেছে!

আশরাফুলের আইনজীবী রাজপাল সিং বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদেশি নাগরিকদের প্রতি মালয়েশিয়ার এমন আচরণকে তিনি ‘অবিচারের ক্ষুদ্র উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

পুলিশ আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে ৩ নভেম্বর। ওই সময় নিজের আইডিকার্ড দেখিয়ে পরিচয় দেন। পাসপোর্ট কেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়েছে, তারও ব্যাখ্যা দেন।

কিন্তু কে শোনে কার কথা। গ্রেপ্তার করে সোজা হাজতে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেও হাজির করা হয়নি!

সিটি ইউনিভার্সিটি এই খবর পেয়ে সি পার্ক থানায় নিজেদের প্রতিনিধি পাঠায়। ছাত্র কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা জামালুল্লাহিল আলিয়াস পাসপোর্ট জমা দেন। কিন্তু তাতেও পুলিশ সাড়া দেয়নি। বলা হয়, আরও তদন্ত করা হবে!

এভাবে দশদিন কেটে যায়। ১৩ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আশরাফুলকে হাজির করা হয়। আশরাফুল শুনানির দাবি জানালে পাঠানো হয় কারাগারে।

আরও তিনদিন পর তার এক বন্ধুর কানে বিষয়টি যায়। তিনি আইনজীবী নিয়োগ করেন।

এরপর ২৫ নভেম্বর আবার তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত পরীক্ষার কথা শুনে ৬ হাজার রিঙ্গিতের বিনিময়ে জামিন দেন। সঙ্গে বলে দেন, প্রতি মসে একবার করে সি পার্ক থানায় হাজিরা দিতে হবে।

সিটি ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যে আশরাফুলের ভিসা নবায়ন করেছে। মামলাটির আবার শুনানি হবে ৫ ফেব্রুয়ারি।

ঘটনা এতটুকুতেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর আশরাফুলের জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেছে। এর শুনানি হবে আগামী সোমবার।

ইতিমধ্যে প্রায় এক মাস জেল খাটা আশরাফুল যখন পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন তাকে ভাবতে হচ্ছে মামলা নিয়ে। আইনজীবী বলছেন, ‘জামিন চ্যালেঞ্জ করা একটা হাস্যকার বিষয়। যেখানে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে, সেখানে আর কথা থাকতে পারে না।’

‘এভাবে চলতে পারে না। একজন মানুষ অপরাধ ছাড়া কেন জেল খাটবেন।’

স্থানীয়দের ক্ষোভ: আশরাফুলের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ করছেন স্থানীয়রা। জেবরাজ ভিক্টর নামের একজন লিখেছেন, ‘শুধুমাত্র মালয়েশিয়াতেই এসব সম্ভব।’

তেনজো তয়মা নামের আরেকজন বলছেন, ‘ঘটনাস্থলে আশরাফুল অর্থ দিলে সব মিটে যেত। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এটা কী ধরনের আচরণ। দোষ ছাড়াই তাকে প্রায় একমাস জেলে থাকতে হয়েছে!’

সুত্র দেশ রুপান্তর