বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
প্রতিটি শিঙাড়া মাত্র এক টাকা! তা-ও আবার হাতের কাছেই মিলছে! এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য নয়, গত ৩০ বছর ধরে চলছে। কী- অবাক বনে গেলেন! হবেন-ই বা না কেন? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এমন কথা শুনলে তো অবাক হওয়ারই কথা যে কারো। তবে বাস্তবেই এমনটা দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা শহর ও সেখানকার যাত্রীবাহী ট্রেনে।
শিঙাড়া বিক্রেতার নাম ছলেমান হোসেন (৭০), বাড়ি কুষ্টিয়ার পোড়াদহে। ১৯৭২ সাল থেকে অর্থাৎ গত ৫০ বছর ধরে ফেরি করে শিঙাড়া বেচে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে তার। তাদের মধ্যে দুই ছেলে পরিবার নিয়ে আলাদা থাকায় মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আছেন ছলেমান।
জানা গেছে, বাড়ির কাছের পোড়াদহ থেকে প্রতিদিন সকালে ট্রেনে চরে শিঙাড়া বিক্রি করতে থাকেন। বাকি শিঙাড়া চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে নেমে শহরের অলিগলিতে বিক্রি করে আবার একইভাবে বাড়ি ফেরেন তিনি।
‘শিঙাড়া চাচা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ছলেমান হোসেনের শিঙাড়ার বেশ মজাদার বলেই জানান স্থানীয়রা। তারা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় তার শিঙাড়র আকার একটু ছোট হলেও স্বাদ আগের মতোই আছে। কেউ কেউ বলছেন, বাজারে পাওয়া ৫ টাকার শিঙাড়ার চেয়েও ছলেমানের এক টাকার শিঙাড়া বেশি মজার।
তার স্ত্রী বুলবুলি খাতুন জানান, ২৫ পয়সা দরে শিঙাড়া বিক্রি শুরু হয়, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ১৯৯০ সালে এসে এক টাকায় দাঁড়ায়। এরপর গত ৩০ বছরে আর দাম বাড়ানো হয়নি, অর্থাৎ একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
কম দামে মজাদার শিঙাড়া পাওয়ায় অনেকেই ১০-১৫টা করে কিনে নিচ্ছেন, তার কমও কিনছেন কেউ কেউ। এভাবেই প্রতিদিন তৈরি করা প্রায় ৮০০ শিঙাড়া দুপুরের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ছলেমানের শিঙাড়ার ভোক্তা সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।
এ থেকে যে লাভ হয়, তা দিয়েই সংসার চলে তার। তবে উচ্চাভিলাষ না থাকায় তেমন একটা টানাপোড়েন নেই সংসারে। এমনটা জানিয়ে ছলেমান হোসেন একটা হাসি দিয়ে বললেন, গরিব ছোট শিশুরাই শিঙাড়া বেশি কেনে। তাদের কষ্ট হবে ভেবে দাম বাড়াচ্ছি না, এক টাকায়ই বাকি জীবন বেচব শিঙাড়া।