বিদ্রোহীদের ভাগ্য নির্ধারণ বছরের শুরুতেই

121

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

আগের কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো কয়েকটি ধাপে চলমান পৌরসভা নির্বাচনেও ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’দের নিয়ে তৃণমূলে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। বেশকিছু পৌরসভাতেই দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বাইরেও দলের কেউ কেউ ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন নির্বাচনে। আগের কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তাই এবারে আগেই আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ছিল— এর আগে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী ছিলেন, তাদের আর কোনোভাবেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

বিদ্রোহীদের ‘দমনে’ এবার আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও চিন্তায় রয়েছে আওয়ামী লীগের। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, অর্থাৎ তাদের দলের কোনো পদ-পদবীতেই রাখা হবে কি না— এসব নিয়েই ভাবছে দলের হাইকমান্ড।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, নতুন বছরের প্রথম মাস, তথা জানুয়ারিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠক থেকেই আসতে পারে বিদ্রোহীদের দলের পদ-পদবীতে রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত। তার আলোকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ।

দলের শীর্ষ নেতারা জানান, অতীতে পৌরসভা নির্বাচনে সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন, তাদের কেউ জয়ী হয়েছেন, অনেকে পরাজিত হয়েছেন। এমন অনেকে দলের তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক পদ-পদবীতে আছেন। তাদের অনেকের নিজ নিজ এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তবে এবার পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, অতীতে যারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন তাদের পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তাই আগামীতে এই বিদ্রোহী ‘তকমাওয়ালা’ নেতারা কোনো সাংগঠনিক পদ-পদবীতে আসতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে নতুন বছরের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে, ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনে দলের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়। সেই সময় এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে স্বস্তিতে ছিল না তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের নেতারা। সেই সময় বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকেই পড়েছিল ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড। এবার বিভিন্ন ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বিদ্রোহীরা দলের মনোনয়ন পাবেন না, এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৫টি পৌরসভা নির্বাচনে এখনো কয়েকটিতে ক্ষমতাসীন দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ রয়েছেন, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার আড়ালে নির্বাচনের মাঠে লড়ছেন দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা খোঁজখবর রাখছেন।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, কোথাও কোথাও আলাপ-আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্রোহী তথা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাংগঠনিক কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা উচ্চারণ করে সতর্কও করা হচ্ছে। তারপরও স্থানীয় প্রভাবশালী বলয়ের মদতে অনেকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এতে দলীয় মেয়র প্রার্থীসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। কোথাও কোথাও প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ অন্যান্য দলের শক্তিশালী প্রার্থী থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর ‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। অতীত পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় এবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় দলের হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, প্রথম ধাপের মতো পরবর্তী ধাপের পৌরসভা নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে এমন কঠোর অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষিত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৬১টি পৌরসভার দলীয় মেয়র প্রার্থী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় কঠোর মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এসব প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। আর তৃতীয় ধাপের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় আরও ৬৪টি পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায়ও একই মনোভাব থাকবে দলের। তবে অতীতে পৌরসভা নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী হয়ে কেউ মেয়র হয়েছেন, কেউ পরাজিত হয়েছেন, তাদের এবার মনোনয়ন পত্র তোলার সুযোগ দেওয়া হলেও মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক  বলেন, ‘এই প্রথম একটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যে তাদেরকে (বিদ্রোহী) আর কোনোদিন নৌকা দেওয়া হবে না। এটি একটি কিন্তু বিরাট পানিশমেন্ট। নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি করা হয়েছে। তারপর তারা দলের ভেতরে কোনো পদ-পদবী পাবে কি না— এটিও সিদ্ধান্তের বিষয়।’

নানক বলেন, এই বিষয়টি নিয়েও আমরা আলাপ করব। আমাদের প্রেসিডিয়ামের সভা হবে, সেখানে আলাপ করব। নেত্রীর নির্দেশনা গ্রহণ করা হবে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হবে, সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্রোহী, সে তো শুধু নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেনি, শুধু নির্বাচনি ক্ষেত্রটার জন্য হতে পারে না! তার দলে অবস্থাটা কী থাকবে সেটিও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

বিগত পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন না দিলেও আগামীতে তাদের সাংগঠনিক পদ-পদবীতে আসার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, তাদের ওই সময় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। আগামীতে তারা পদে থাকতে পারবে কি না, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। কারণ গত পৌরসভা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহ করেছে, তারা দলের সঙ্গে বিদ্রোহ করেছে। কারণ বিএনপি সেই ইলেকশনে ছিল। উপজেলায় আমরা বেশি গুরুত্ব দেইনি। তাই এবার পৌরসভা নির্বাচনে যাদেরকে দিচ্ছে না, তারা কিন্তু তখন বিএনপি মাঠে ছিল তখন নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন করেছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ছিল না, সেখানে আমরা কিছুটা ছাড় দিয়েছি কিন্তু যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে, সাংগঠনিকভাবে তারা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটার এখনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

সুত্র সারাবাংলা ডটকম