বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
লাশ কবর দেয়ার ইসলামী নিয়ম না মেনে করোনায় মারা যাওয়া মুসলিম শিশুদের লাশ পুড়িয়ে ফেলছে শ্রীলঙ্কা। সম্প্রতি জোরপূর্বক ২০ দিন বয়সের এক মুসলিম শিশুর লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রীলকার মুসলিমসহ অন্য ধর্মালম্বীরা।
মোহাম্মদ ফাহিম ও ফাতিমা শাফনার ঘরে জন্ম নিয়েছিল ২০ দিনের শিশুটি। দীর্ঘ ছয় বছরের অপেক্ষার পর তাদের ঘর আলো করে এসেছিল নবজাতক। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা যায়।
গত ৭ ডিসেম্বর রাতে শিশুর বাবা-মা খেয়াল করলেন শিশুটির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত তাকে দ্য লেডি রিজওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
লেডি রিজওয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর শিশুর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা তখন বাবা-মাকে শিশুর গুরুতর অবস্থার কথা জানায়। পরে বাবা-মাকে করোনা টেষ্ট করা হলে ফলাফল নেগেটিভ আসে। এই অবস্থায় শিশুকে হাসপাতালে রেখে বাবা-মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর পরের দিনেই হাসপাতালের স্টাফরা তাদের ডেকে জানায়, শিশুটি বেঁচে নেই।
এই শিশুর মৃত্যু করোনাভাইরাসে হয়েছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাবা-মা শিশুর পিসিআর টেস্টের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টেস্ট করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে শিশুর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অনুমতি দেয়ার জন্য চিকিৎসকরা পুরুষ অভিভাবককে একটি সরকারি নথিতে স্বাক্ষর করতে বললে শিশুর বাবা ফাহিম তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি ইসলামে লাশ পুড়ানো হারাম উল্লেখ করে সন্তানকে মুসলিম রীতিতে দাফনের দাবী জানান। কিন্তু সরকারী কর্তৃপক্ষ দাবী উপেক্ষা করে শিশুর লাশ পুড়িয়ে ফেলে। অন্য অনেক মুসলমানদের মতো শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার কারণে তাদের প্রিয়জনদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
ফাহিম বলেন, আমার শিশুর লাশ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বহুবার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) মুসলমানদের লাশ অযৌক্তিকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়টি লক্ষ্য করে শ্রীলঙ্কাকে দেশটির দাহনীতি পরিবর্তন করতে বলেছে। ২০ দিনের শিশুর লাশ পুড়ানোর খবরটি ভাইরাল হলে মুসলমান-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেছে, মুসলমানরা যাতে সঠিকভাবে লাশ দাফন করতে না পারে এজন্যে শ্রীলংকা সরকার রাতারাতি কফিন হিসেবে পরিচিত ‘সাদা কাপড়’ বাজার থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
অনেক মুসলমান এটিকে সরকারের বর্ণবাদী কৌশল বলে দাবি করেছেন।
সূত্র : বিবিসি, দি ইসলামিক ইনফরমেশন