রাজধানীতে ১ টাকায় নারীর থাকার জায়গা

103

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
রাজধানীতে রাতে থাকার জায়গা, তাও আবার নারীর জন্য; মাত্র ১ টাকায়! কথাটি অবাস্তব মনে হলেও ‘বাসন্তী নিবাস’ বিষয়টিকে বাস্তবে পরিণত করেছে। নানা কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীকে রাজধানীতে আসতে হয়। আত্মীয়-স্বজন না থাকলে রাতে থাকার জায়গা নিয়ে পরতে হয় বিড়ম্বনায়। হোটেল অনেকের জন্যই অস্বস্তিকর এবং ভরসার জায়গা নয়। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথাই সবার আগে মনে পড়ে। উল্লেখিত সবগুলো বিষয় বিবেচনা করে নিরাপদে নারীর রাত্রীযাপনের চিন্তা থেকেই বাসন্তী নিবাসের যাত্রা শুরু।

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। কিন্তু ২০১৮ সালের ৮ মার্চ স্মরণীয় হয়ে থাকবে আরো একটি কারণে। এদিন বাসন্তী নিবাসের যাত্রা শুরু হয়। ঠিকানা রাজধানীর পল্লবী আবাসিক, ২/বি-এর ১৩ নম্বর বাড়ি। শুরুতে এজন্য প্রতিটি নারীকে ৭১ টাকা দিতে হতো। কিন্তু বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তারা লক্ষ্য করলেন চারদিকে নারীর উপর নির্যাতন ও হয়রানি বাড়ছে। তখন তারা ভাড়া কমিয়ে প্রতি রাতের জন্য মাত্র ১ টাকা নির্ধারণ করেন। এখানেই শেষ নয়। রাতে যারা বাসন্তী নিবাসের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন পরদিন সকালে তাদের নাস্তা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। এর সঙ্গে ফ্রি ওয়াইফাই, ওয়াশিং মেশিনের সুবিধাও রয়েছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, বাসন্তী নিবাস এক ধরনের ক্যাপসুল হোটেল; পুরোটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বিদ্যানন্দের অফিসের একটি ফ্লোরে তৈরি করা হয়েছে নারীর জন্য রাতের নিরাপদ এই সুব্যবস্থা। ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছেন তাহমিনা আক্তার। তিনি জানালেন ১৭ শ’ বর্গফুটের ক্যাপসুল হোটেলটিতে ১৮টি বাঙ্ক বেডে (দ্বিতল শয্যা) প্রতি রাতে ৩৬ জন নারী থাকতে পারবেন। প্রতিটি বাঙ্কের সঙ্গে রয়েছে আলাদা ক্যাবিনেট। কক্ষের সঙ্গে আছে দুটি ওয়াশরুম। খাবার ঘর আলাদা। সেখানে একসঙ্গে ৭ জন খাবার খেতে পারবেন। তবে একজন নারী শিক্ষার্থী মাত্র এক টাকায় থাকতে পারলেও, চাকরিপ্রার্থী নারীর জন্য ভাড়া ১৯৯ টাকা। এছাড়া চাইলেই দীর্ঘ সময় এখানে কেউ থাকতে পারবেন না। সর্বোচ্চ তিনদিন থাকার সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে অনুমতিসাপেক্ষে এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তার বেশি কখনও নয়। কারণ আরেকজনকে তো সুযোগ দিতে হবে।

 

জরুরি কাজে রাজধানীতে এসেছেন মুক্তি আক্তার। উঠেছেন বাসন্তী নিবাসে। তিনি জানান, ঢাকায় কাজ শেষ করে রাতের বাসে বাড়ি ফিরে যেতে পারেননি। এদিকে সকাল পর্যন্ত কোথাও অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাসন্তী নিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। এবং তিনি নিশ্চিন্ত বোধ করছেন।

রাজধানীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন শারমিন। তিনি বলেন, ‘আমি হলেই থাকি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হল বন্ধ থাকায় বাসন্তী নিবাসে চলে এসেছি।’ বিশেষ অফারে মাত্র ১ টাকায় নিরাপদ থাকার জায়গা খুঁজে পেয়ে আনন্দিত তিনি।

কেন এমন উদ্যোগ? জানতে চাইলে তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘জীবনের তাগিদে রাজধানীতে আসেন অনেকে। পয়সা দিলে থাকা খাওয়ার ভালো জায়গা জোটে। তবে তা পুরুষের জন্য যতটা সহজ, নারীর জন্য নয়। চাকরি বা পড়াশোনার জন্য কোনো পরীক্ষা, চিকিৎসা অথবা কোনো প্রয়োজনে নারীকে যদি রাতে ঢাকায় থাকতে হয় এবং তার কোনো নিকটাত্মীয় বা মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকে, তবে বিপদে পড়তে হয়। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা তো আছেই। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এমন নারীদের জন্যই তৈরি করেছে বাসন্তী নিবাস।’

কথাপ্রসঙ্গে তাহমিনা আরো জানালেন, প্রকৃতপক্ষে যারা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা আসেন, যাচাই-বাছাই করে শুধু তাদেরই থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এ প্রসঙ্গে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক স্মৃতি বলেন, ‘একজন নারীকে এখানে থাকতে হলে তার পরীক্ষা কিংবা চাকরি সংক্রান্ত ভ্যালিড কাগজপত্র দেখাতে হবে। এবং অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। এখানে সব সময় নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। চাইলেই যে কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

শুধু নারীর জন্য এটি বাংলাদেশের প্রথম আবাসিক হোটেল। এই শহরে কত নারীকে কতভাবে যে হয়রানির শিকার হতে হয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিপ্রা দাস বলেন, ‘এটি জনবান্ধব উদ্যোগ। আমরা আশা করছি, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে আমরা আরো অনেক দূর নিয়ে যাব। এটি আমাদের স্বেছাসেবা কার্যক্রমের অংশ।’

বাসন্তী নিবাসে দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। পাঁচ টাকায় বাসন্তী স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ বিভিন্ন ধরনের জনবান্ধব কাজের মাধ্যমে এরই মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পরিচিত ও সমাদৃত হয়ে উঠেছে।

সুত্র রাইজিং বিডি