আনাড়ি ডাক্তারের কাণ্ড, সিজারের সময় ভুড়ি বের হয়ে নবজাতকের মৃত্যু

191

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলায় ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারে প্রসূতির সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের ভুড়ি বের করে দেয়া হয়েছে। প্রসূতি বেঁচে গেলেও সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতক এক দিন পর মারা গেছে। রোববার বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আনাড়ি ডাক্তার দিয়ে সিজার করার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে রোগীর লোকজনের অভিযোগ। প্রসূতি ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকলেও সদ্যভূমিষ্ঠ নবজাতককে নেয়া হয়েছে নিজবাড়ি উপজেলার মাজু গ্রামে। ইউনাটেড মেডিক্যাল সেন্টারের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ভুল অপারেশনের অভিযোগ আছে। এমনকি কয়েকবার ক্লিনিকটি বন্ধের নির্দেশও দেয় কর্তৃপক্ষ। তারপরও অবৈধভাবে ক্লিনিকটি চালিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজু গ্রামের সাগর আলীর স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে শুক্রবার আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওই দিন দুপুরে প্রসূতির সিজার করা হয়।

প্রসূতি রুমা খাতুনের স্বামী সাগর আলী বলেন, ‘সিজার করার সময় নবজাতকের পেট কেটে নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। ওই অবস্থায় আমার সন্তানকে না দেখিয়ে গোপন কক্ষে তিন ঘণ্টা রেখে দেয়। এরপর তার মায়ের কাছে দেয়া হয়। ভূমিষ্ঠের পর নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসার কারণে সন্তানের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে। শুক্রবার রাতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়। আমার সন্তানকে কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে আমার সন্তানকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসি।’

সাগরের ফুফাতো ভাই উজ্জ্বল হোসেন জানান, ‘শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে নবজাতককে আবারো আমরা কুষ্টিয়া সনো সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’

তিনি আরো জানান, আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারের মালিক নাজমুল হক নিজেই অপারেশন করেছিলেন। তবে শর্ত অনুযায়ী একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনকে দিয়ে সিজার করানোর কথা ছিল। তারা এটা করলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না।

এ ব্যাপারে ইউনাইটেড ক্লিনিকের মালিক উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার নাজমুল হক বলেন, ‘প্রসূতির অপারেশন করেছেন ডা: বিপাশা। জন্মের সময় ত্রুটির কারণে শিশুর নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসে। এটা ডাক্তারের ত্রুটি নয়। এখানে কারো কিছু করার ছিল না। ময়নাতদন্ত করলেই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। পুলিশকেও আমি একই কথা বলেছি।’

তবে সাগর আলী বলেছেন, জন্মের সময় কোনো ত্রুটি থাকলে তো আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখা যেতো। কিন্তু রিপোর্ট স্বাভাবিক ছিল।

এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানার এসআই জামাল বলেন, এ ঘটনায় মারা যাওয়া শিশুর বাবা সাগর আলী একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ দিকে এর আগেও ইউনাটেড মেডিক্যাল সেন্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ভুল অপারেশনে একাধিক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় একাধিক সময়ে ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম বন্ধেরও নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তারপরও তারা অবৈধভাবে ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

একাধিক অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৭ মার্চ অপারেশনের পর প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারের সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: এহসানুল হক তন্ময়ের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত টিম ওই ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। এর দু’দিন আগে ৫ মার্চ ২০ কুষ্টিয়া মিরপুরের মালিহাদ ইউনিয়নের রায়পাড়া গ্রামের রহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের প্রসব বেদনা দেখা দিলে তাকে আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক মালিক নাজমুল ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে অপারেশন করার পর একটি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রসূতির প্রেসার বেড়ে গেলে তা কমানোর জন্য ইনজেকশন দেয়া হলে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ফাতেমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কুষ্টিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। কুষ্টিয়ায় নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রসূতি ফাতেমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই সময় রোগীর স্বজনরা বলেন, ক্লিনিকে ফাতেমার মৃত্যুর পর তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সে করে দেয় ক্লিনিকের লোকজন। এ ঘটনায় তারা লাশ নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারের সামনে অবস্থান নিয়ে বিচার দাবি করেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: এহসানুল হক তন্ময়কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ওই তদন্ত টিম ইউনাইটেড মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক তদন্তে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা বলেন, এর আগেও এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কয়েকবার এই হাসপাতালের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমি এ ঘটনা শুনেছি। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিঠি গঠন হবে। কমিটির রিপোর্ট এলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’