রেমিট্যান্সে ঝড়ো গতি,৬ মাসেই বেড়েছে ৩৭.৫৯ শতাংশ

144

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

করোনার লকডাউনের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের চাকরি হারানো বা কাজ না পাওয়ার শঙ্কায় রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্ত মহামারির প্রভাবে গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স কিছুটা কমলেও তারপর থেকে চলছে ঊর্ধ্বগতির ধারা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর শেষে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করায় রেমিটেন্স অনেক বড় অবদান রেখেছে। সাত মাস আগেও গত বছরের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

গত ৩০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রিজার্ভের আকার একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। যা করোনা প্রাদুর্ভাবের পরেও দেশের অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে। রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠানোর লক্ষ্য অর্জন করায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদও জানান অর্থমন্ত্রী।

করোনার বছরেই ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর পরিমাণ প্রায় পৌনে ২২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এই সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। এই প্রণোদনা দেওয়ার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বলছেন, নগদ প্রণোদনার জাদুতেই রেমিট্যান্সে এই অনন্য রেকর্ড হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক সময় হুন্ডিতেই ৩০-৪০ শতাংশ রেমিট্যান্স আসতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপে এখন হুন্ডি কমে গেছে। কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর এটা ব্যাপকভাবে কমেছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা একবার ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো শুরু করেছে, তাদেরকে যদি একটু ভালো সেবা দেওয়া যায়, তারা ব্যাংকের মাধ্যমেই টাকা পাঠাবেন। পুনরায় হুন্ডিতে ফিরবেন বলে মনে হয় না। এছাড়া রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতি ধরে রাখতে সরকারের প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিদেশে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণেও জোর দিতে হবে।’

গত ডিসেম্বর মাসেও দেশে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স এসেছে। এর পরিমাণ ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। আগের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স আসে আরো বেশি, ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। তার আগের মাস দেশের ইতিহাসে একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড গড়েছিল। ওই মাসে রেমিট্যান্স আসে ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর জুলাইতে একক মাস হিসেবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে। ওই মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

সবমিলে ২০২০ সালের পুরো সময়ে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ( ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিটেন্স আর কখনো আসেনি। এটি তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৪০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার বা ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ২২ লাখ (১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন) ডলার।

এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের হিসাবে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৯৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। সেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৪০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

অন্যদিকে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। গত ৩০ ডিসেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ওইদিন দেশে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৩১৭ কোটি ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে ১০ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।

সুত্র কালের কন্ঠ অনলাইন