এম.এ রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ
‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’ – এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও বগুড়া ধুনট উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের তিন ফসলি কৃষি জমিগুলোকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে করে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এক শ্রেণির পুকুর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ফসলি জমিতে পুকুর খননের লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন। উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নের কৃষি জমিতে মেশিন দিয়ে ৮ ফুট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের এই মহোৎসব চলছে।
দিনরাত বিরতিহীন পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার উপজেলার হাট বাজারসহ বিভিন্ন ইটভাটায় সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এক শ্রেণির প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীরা।
গোসাবাড়ি ইউনিয়নের বড়বিলা গ্রামের মোঃ সাইদুল খার ছেলে সুমন খা (২৭) এলাকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের এই উৎসব চলছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভূক্ত জমি ও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সুমন খাকে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে পুকুর খননের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সংবাদকর্মীকে বলেন, আমি প্রশাসন ও উপজেলার সাংবাদিক ম্যানেজ করে মাটির ব্যবসা করে আসছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার পৌরসভারসহ ১০ টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ১৮৬৭০ /একর ১৫০৬৬/ মেঃ টন ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোনও না কোনও ধরণের ফসল হয়। কিন্তু কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ১১থেকে ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তি করছে কৃষকরা। চুক্তির আওতায় তাদের ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। জমির সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায়
ও নতুন বাড়ি নির্মাণ করার মালিকের কাছে বিক্রয় করছে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে চিকাশি ইউনিয়নের বড় চাপড়া, ছোট চাপড়া, লক্ষ্মীপুর, মোহনপুর, গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের নাটাবাড়ি, পার নাটাবাড়ি, কালের পাড়া ইউনিয়নের আনারপুর নামক স্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি। ইতোমধ্যেই শুধুমাত্র উপজেলার ১০ ইউনিয়নেই প্রায় ৫০ টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। কালের পাড়া ইউনিয়নের আনারপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত জসীমউদ্দীন সরকার ছেলে কেরামত আলী সরকার ওরফে ডাঠু আনারপুর মৌজায় কোন সরকারি অনুমোদন না নিয়ে ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করছেন। অবৈধভাবে পুকুর খনন করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে জমির মালিক কেরামত আলী ওরফে ডাঠু বলেন আমার কৃষি জমিতে পুকুর খনন করব তার আবার কিসের অনুমোদন লাগবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মশিদুল হক বলেন, ‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না’- ভূমি মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় চিকাশী ইউনিয়ন,কালের পাড়া ইউনিয়ন, গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন, মথুরাপুর ইউনিয়ন, ধুনট সদর ইউনিয়ন, চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি পুকুর খনন থেকে বিরত থাকার জন্য। এছাড়াও কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।