আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা

113

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

দু’দলের প্রথম সাক্ষাৎটা ফুটবলপ্রেমীদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০১৮’র নভেম্বরে ফেডারেশন কাপেরই ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল আবাহনী। তবে ওই স্কোরে ম্যাচের উত্তেজনা বোঝানো যায় না। দু’দলের ফুটবলার, কর্তাদের বারবার মেজাজ হারানো, বিতণ্ডা, হাতাহাতি, মারামারিতে সবই হয়েছিল সেই রুদ্ধশ্বাস ৯০ মিনিটে। কাল তেমন কিছুরই ইঙ্গিত মিলেছিল। জমজমাট ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে খেলা অমীমাংসিত ছিল ১-১ এ। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে হয়েছে যতো নাটক।
ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে অফসাইডে জীবনের গোল বাতিলকে কেন্দ্র করে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় ১০ মিনিট। ম্যাচের ১১৯তম মিনিটে জোনাথন আরো এক গোল করলে ৩-১ এর বড় জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠে বসুন্ধরা কিংস। আগামী ১০ই জানুয়ারি বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা সাইফ স্পোর্টিং। বসুন্ধরায় দুই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রবসন ডি সিলভা ও মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নানদেজের সঙ্গে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রাউল বেসেরা। আবাহনীতে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগুস্তো, স্ট্রাইকার ফ্রান্সিসকো তোরেস। সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত বসুন্ধরার মোট ৬ গোলের ৫টিই এসেছে ব্রাজিলিয়ান রবসন ও বেসেরার পা থেকে। আবাহনীকে সেমিফাইনালের টিকিট এনে দিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান তোরেস। এ কারণে গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উভয় দলের কোচের কাছে ভরসা ছিল লাতিন ফুটবলারে। ম্যাচ শুরুর ২০ মিনিট সুরভী ছড়িয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের দুই ব্রাজিলিয়ান। ১২তম মিনিটে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় বসুন্ধরা কিংস। বক্সের বাইরে থেকে রবসন রবিনহোর ডানপায়ের শট আবাহনীর গোলকিপার শহীদুল আলম সোহেলকে পরাস্ত করলেও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ১৭তম মিনিটে খালিদ সাফির কাটব্যাক বেসেরার প্লেসিং কোনোমতে ঠেকিয়ে নিজেদের জাল সুরক্ষিত রাখেন আবাহনীর গোলকিপার সোহেল। এদিন শুরু থেকে রক্ষণাত্মক খেলতে থাকে আবাহনী। ডিফেন্সে শক্তি বাড়াতে উইংগার জুয়েল রানাকে বসিয়ে নাসিরউদ্দিন চৌধুরীকে একাদশে নেন মারিও লেমোস। ২০তম মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় আবাহনী। রাফায়েল আগুস্তোর ফ্রি-কিকে বেলফোর্টের হেড জিকোর গ্লাভসে। ৩১তম মিনিটে ধারার বিপরীতে গোল পেয়ে যায় গত আসরের রানার্সআপরা। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বেলফোর্ট ডিফেন্স চেরা থ্রু বাড়ান ফ্রান্সিসকো তোরেসকে। বক্সের ডানদিক দিয়ে ঢুকে কোনাকুনি শটে জিকোকে বোকা বানান এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। জিকোর দায় আছে এই গোলে। ৪১ মিনিটে দলকে দ্বিতীয় গোল খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান জিকো। রায়হানের থ্রো-ইন থেকে বল পেয়ে সাদউদ্দিন ক্রস ফেলেন বক্সে। তোরেস তা ছোট ডি-বক্সে বুক দিয়ে আয়ত্তে নিয়ে বাঁ পায়ে ভলি করেন। জিকো অবশ্য প্রস্তুত ছিলেন রুখে দিতে। দ্বিতয়ার্ধে দুই পরিবর্তনে ম্যাচে ফেরে বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচের ৫১তম মিনিটে সমতায় ফেরে গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। বদলি আলমগীর কবির রানার ডিফেন্স চেরা পাসে গোল করেন জোনাথন (১-১)। ৮১তম মিনিটে রানার ভুল পাস থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে রানার কাছের পোস্টে নেয়া জোরালো শট ফিস্ট করে ফেরান জিকো। এরপর ওয়ালি ফয়সালের কর্নারে নাসির উদ্দিনের হেড বাইরের জাল কাঁপায়। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ডি-বক্সে ঢুকে শট নিতে দেরি করে সুযোগ নষ্ট করেন কিংসের রবিনিয়ো। এরপর ডান দিক থেকে আবাহনীর ফিলহোর ক্রসে বেলফোর্টের হেড বাইরের জাল কাঁপায়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ৯৮তম মিনিটে বসুন্ধরার দারুণ এক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন আবাহনীর এক ডিফেন্ডার। ১০৬ মিনিটে একটি লংবলে বেসেরার হেড জোনাথন জালে জড়ানোর ঠিক আগ মুহূর্তে কর্নারে ক্লিয়ার করেন নাসির। পরের মিনিটেই গোল করে নায়ক বনে যান রাউল বেসেরা। মাঝমাঠ থেকে জোনাথনের থ্রু ধরে বক্সে ঢোকেন মতিন মিয়া। তার বাড়ানো বলে আগুয়ান গোলরক্ষক সোহেলকে পরাস্ত করে গোল করেন এই আর্জেন্টাইন (২-১)। ম্যাচের ১১০তম মিনিটে সুযোগ তৈরি করেছিল আবাহনী। কিন্তু বেলফোর্টের ক্রস ফ্রান্সিসকোর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে গোল বঞ্চিত হয় আকাশী-হলুদ শিবির। শেষ বাঁশি বাজানোর দুই মিনিট আগে গোল করেছিলেন জীবন। বাদশার ক্রস বেলফোর্টের হেড বুক দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রান্সিসকো। তা থেকে গোল করেন আবাহনীর অধিনায়ক। রেফারি সুজিত ব্যানার্জি অফসাইডে সেই গোল বাতিল হলে খেলা বন্ধ থাকে ১০ মিনিট। এ সময়ে সহকারী রেফারির বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ করেন আবাহনীর ফুটবলাররা। ম্যাচের শেষ মিনিটে আবাহনীর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন জোনাথন। রবসনের পাসে গোল করেন এই ব্রাজিলিয়ান। ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বসুন্ধরা কিংস।