ঐতিহাসিক গাংনগর শিবের মেলা

260

আরিফুল ইসলাম

গাং ও নগর এই দুটি আলাদা শব্দ।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় নগর বা জনবসতি সেখানেই গড়ে ওঠে, যেখানে নদী থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশের লিখিত নদী গুলোর মধ্য গাং নামে কোন নদী নেই।
গাং ছিল নদীর শাখা যা এই জনপদের মানুষ গাং নামে ডাকত।

আদি সভ্যতার দিকে দেখলে দেখা যায়
পুন্ড্রনগর এক সময় এ বাংলার রাজধানী ছিলো। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে জনপদ গড়ে উঠেছিলো। এই পুন্ড্রনগরে মৌর্য,গুপ্ত,পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ছিলো, পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিলো।

গাং নদীর ধারে গড়ে ওঠা জনপদের একটি ঐতিহ্য এখনো আমরা বহন করে চলেছি, তা হলো ঐতিহাসিক শিবের মেলা

যা শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলি ও সৈয়দপুরের ইউনিয়নের সীমানায় গাংনগর বাজারে (যার আয়তন ১.৭) বসে শিবের মেলা ।
যা প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস বহন করে আসছে
পূর্বে শিব পূজাকে কেন্দ্র করে মেলা বসলেও বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে তা ঐতিহাসিক গাংনগর মেলা নামে পরিচিত ।

বাংলা নতুন বছর আসে
আর গাংনগর বাসীর জন্য আসে ঐতিহাসিক শিবের মেলা ।
বৈশাখ মাস। এই মাসের প্রথম সোমবার কিংবা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় এই মেলা। তা চলে টানা সাত দিন পর্যন্ত।

এই মেলা উপলক্ষে আসে পাশের এলাকায় বাড়ী বাড়ী আনন্দ উল্লাস আর আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনা ছিল দেখার মতো

৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় পাওয়া যায় পুকুর ও নদীর মিঠা পানিতে বেড়ে ওঠা ছোট-বড় নানা রকমের তরতাজা মাছ ‌।
শিশুদের আনন্দ-বিনোদনের জন্য মেলায় পাওয়া যায় মাটির পুতুল, পালকি, ঘোড়া, ষাঁড়, হরিণ, হরেক রকমের ঘুড়ি, টমটম, লাটিম, গাড়ি, বল, বেলুন, বাঁশিসহ নানান রকমের খেলনা। গাঁয়ের বধূ ও কিশোরীরা মেলা থেকে কিনে নেন আলতা, স্নো, পাউডার, কাঁচের চুড়ি, নাকের নোলক, কানের দুল, চুলের ফিতা, খোপা, ক্লিপসহ জিনিসপত্র সহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ।

দূর দূরান্ত থেকে দলে দলে ছুটে আসা মানুষরা তাদের নিজ সাধ্যমত অনুযায়ী মেলায় মাছ কিনে ।
মেলা থেকে বের হলেই দেখা যায় সবার হাতে মাছের ব্যাগ অথবা ঝুলছে মাছ

যা মেলার একটি বিশেষ আকর্ষণ বলে মনে করে মেলা আয়োজকরা
মেলার আরেকটি আকর্ষন হিসেবে মনে করে সার্কাস ও নাগরদোলা
এইটা শুধু মেলায় নয় গাংনগর বাসীর কাছে এক আনন্দ উল্লাস করার মাধ্যম