বগুড়ার শেরপুরে ফরিদুল খুনের রহস্য উন্মোচনঃ পরিবারের ৫ সদস্য গ্রেফতার

150

স্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিজ পরিবারের সদস্যরাই ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করে। খুনের সঙ্গে জড়িত নিহতের আপন ভাই, ভাবী, ভাতিজা, চাচা ও শ্যালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাঁচজনকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে মাত্র ৭ দিনের মধ্যে ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং জড়িত সকল আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলো বগুড়া জেলা পুলিশ।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানান।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- নিহত ফরিদুলের চাচা আব্দুর রাজ্জাক (৫৮), ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জিয়া (৪৫), ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ (২৫), ভাবী শাপলা খাতুন (৩৫) ও শ্যালক ওমর ফারুক (৩৫)।

গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় শেরপুর থানার ইটালী মধ্যপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে খুন হন ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম। এঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী ইসমত আরা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে শেরপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছিল না। ক্লু নিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা যখন চিন্তিত ঠিক সেই সময় গত ৮ জানুয়ারি পুলিশের কাছে একটি অপহরণের তথ্য আসে। নিহত ফরিদুলের শ্যালক ওমর ফারুককে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার স্ত্রীর কাছে ফোন আসে। পুলিশ অপহৃত ওমর ফারুককে মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধার করার পর জানতে পারেন তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করে অপহরণ নাটক সাজিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওমর ফারুক ফরিদুল খুনের ক্লু পুলিশকে জানায়। ওমর ফারুক পুলিশকে আরও জানায়, নিজের দুলাভাইকে খুন করার পর তিনি মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকেন। অপহরণ নাটক সাজিয়ে তিনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। ওমর ফারুকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ অপর চারজনকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে নিহত ফরিদুল তার মা’র সম্পত্তি থেকে ভাইবোনদের বঞ্চিত করেছে। মায়ের মৃত্যুর দুই বছর পর তিনি দলিল বের করে ভাই বোনদেরকে জানান সকল সম্পত্তি তাকে লিখে দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে পুরো পরিবারের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও জমি বন্ধক নেওয়াকে কেন্দ্র করে তিন লাখ টাকা লেনদেন নিয়ে শ্যালক ওমর ফারুকের সাথে ফরিদুলের বিরোধ চলছিল। একারণে ওমর ফারুকও ফরিদুলের ভাই-ভাতিজাসহ অন্যান্যদের সাথে খুনের পরিকল্পনায় যোগ দেন।

গত ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রী-সন্তান ঢাকায় যাওয়ায় ফরিদুল বাড়িতে একাই অবস্থান করায় খুনিরা এই সুযোগ কাজে লাগায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ফারুক আহম্মেদ চাকু নিয়ে ফরিদুলের বাড়িতে প্রবেশ করে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদুল বাড়িতে প্রবেশ করলে ওমর ফারুক তার মাথায় ছুরিকাঘাত করে। এসময় ফরিদুলের চাচা, ভাই-ভাবী ও ভাতিজা দরজা দিয়ে প্রবেশ করে ফরিদুলকে ধরে বটি ও চাকু দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তারাই পুলিশকে খুনের সংবাদ দেয় এবং ফরিদুলের মরদেহ উদ্ধার এবং দাফন কাফনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, নিহতের শ্যালক ওমর ফারুককে উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম মাঠে নামেন। মানিকগঞ্জ থেকে তাকে উদ্ধারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ফরিদুল হত্যার ক্লু ও রহস্য উন্মোচন হয়। এরপর ১২ জানুয়ারি রাতভর অভিযান চালিয়ে জড়িত অপর চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

সুত্র বার্তা ২৪