প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয়বারের মত অভিশংসিত ট্রাম্প

162

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে, দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষেদের ২৩২-১৯৭ ভোটে আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পকে অভিশংসন করেন। এতে মেয়াদের বাকি কয়েকটা দিন, তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না নির্বিঘ্নে। ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলার ঘটনার জন্য যে অভিশংসন, যথারীতি তার দায় অস্বীকার করেছেন ৪৫তম এ প্রেসিডেন্ট।

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বিতর্ক শেষে অবশেষে অভিশংসনের পক্ষেই রায় দিলো কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ। স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে ভোটাভুটিতে আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পকে অভিশংসন করেন। ডেমোক্র্যাট নেতারা ছাড়াও, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনিসহ ১০ জন রিপাবলিকান নেতাও ভোট দেন বিরোধীদের আনা এ প্রস্তাবে।

মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুইবার এই লজ্জার স্বীকার হলেন। আইনপ্রেণেতারা বলছেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য শুভ নন। তার কোনো অধিকার নেই বাকি কটা দিন, দেশ পরিচালনা করার।

এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমবার অভিশংসনের স্বীকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয়বার অভিশংসন হওয়া নজিরবিহীন ঘটনা। অভিশংসনের এই বিল উচ্চকক্ষ সিনেটে উত্থাপিত হবে। সেখানে ‘ইমপিচমেন্ট ট্রায়ালে’ ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেই কেবল ক্ষমতাচ্যুত হবেন। তবে ২০১৯ সালেও সিনেটে চূড়ান্ত ট্রায়ালে অভিশংসন হননি ট্রাম্প।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাছাড়া সিনেটে অভিশংসন হতে হলে দুই তৃতীয়াংশ সিনেট সদস্যদের ভোটের প্রয়োজন হবে। যদিও এর আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাতে তিনি সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করতে রাজি নন।

এদিকে ক্যাপিটল হিলের নজিরবিহীন হামলার ঘটনার জন্য যে অভিশংসন, যথারীতি তার দায় অস্বীকার করেছেন ৪৫তম এ প্রেসিডেন্ট। জানান, তিনি সমর্থকদের শান্ত থাকার কথাই বলেছিলেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা বুধবার কংগ্রেসের এক যৌথ অধিবেশনে বসেন। উভয় কক্ষের এই অধিবেশনে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজের দেয়া ভোটগুলো গোনা হয় এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করা হয়। অধিবেশনের কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই এর বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হতে থাকেন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। সমাবেশে বক্তব্য দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সমাবেশের অল্প একটু দূরেই ক্যাপিটল ভবন। ট্রাম্পের কয়েকশ উগ্র সমর্থক সেখানে গিয়ে ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। কংগ্রেসের অধিবেশন চলাকালেই পুলিশের বাধা ভেঙে ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। ভবনে ভাঙচুরও চালান। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। গোলাগুলি এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

ট্রাম্প সমর্থকদের আগ্রাসী তাণ্ডবের মুখে ক্যাপিটল ভবন অবরুদ্ধ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। ওয়াশিংটনে জারি করা হয় কারফিউ।

সংঘর্ষের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের (হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) সদস্যদের পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে সিনেট অধিবেশনও মুলতবি করা হয়।

পরে ক্যাপিটল ভবন থেকে ট্রাম্প সমর্থকদের হটাতে তিনঘণ্টা সময় লাগে পুলিশের। শেষ পর্যন্ত বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাপিটল ভবনকে নিরাপদ ঘোষণা করে পুলিশ। পরে আইনপ্রণেতারা ফের অধিবেশনকক্ষে ফিরে আসেন। আবার শুরু হয় যৌথ অধিবেশন।

উল্লেখ্য, কংগ্রেসে স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। আর ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবেও অনেক পিছিয়ে ট্রাম্প। তার ২৩২টির বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে আসে ৩০৬টি। কিন্তু শুরু থেকেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। তবে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বড় ধরনের জালিয়াতির অভিযোগকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়েছেন।

সূত্র- বিবিসি, এনবিসি।