বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
চলতি মাসেই দেশে আসছে করোনাভাইরাসের টিকা। এরই মধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। টিকা পেতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। রাজধানী থেকে জেলাপর্যায়ে বিতরণ পরিকল্পনাও প্রায় চূড়ান্ত। কোন বিভাগ কত টিকা পাবে, সে বিষয়ে একটি খসড়াও তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি প্রথমে ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসবে। পরে ভারত থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আরো তিন কোটি টিকা দেশে আসবে। দেড় কোটি মানুষের প্রতিজনকে দুই ডোজ করে মোট তিন কোটি টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত জেলাগুলোতেও যাবে প্রথম ধাপের টিকা। তবে প্রথম দফার এ ২৫ লাখ নির্বাচনই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মতে, যেহেতু প্রথম ধাপেই সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যাচ্ছে না, তাই কারা এর আওতায় আসবে সেটা নির্ধারণই বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘প্রথম ধাপে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের। তার পরে সাধারণ মানুষ টিকা পাবে। সেখানে ১৮ বছরের নিচের জনগোষ্ঠী থাকবে না। বাদ যাবেন অন্তঃসত্ত্বা কিংবা জটিল রোগে আক্রান্তরা।’
খসড়া তালিকা অনুযায়ী, টিকা বণ্টনের ক্ষেত্রেও বরাবরের মতো বেশি প্রাধান্য পাবে ঢাকা। প্রথম ধাপে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকা থেকে ঢাকা জেলা পাবে সাড়ে ১২ লাখ ডোজ। আর বিভাগ হিসেবে মোট তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫০ লাখ মানুষ পাবে টিকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৩০ লাখ, রাজশাহী বিভাগের ২০ লাখ, রংপুর বিভাগের সাড়ে ১৬ লাখ, খুলনা বিভাগের ১৬ লাখ, সিলেট বিভাগের সাড়ে ১০ লাখ, বরিশাল বিভাগের সাড়ে আট লাখ ও ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।
আর জেলা হিসেবে দিনাজপুরে তিন লাখ, কুড়িগ্রামে দুই লাখ, লালমনিরহাটে এক লাখ, গাইবান্ধায় আড়াই লাখ, নীলফামারীতে দুই লাখ, পঞ্চগড়ে এক লাখ, ঠাকুরগাঁওয়ে দেড় লাখ, হবিগঞ্জে দুই লাখ, মৌলভীবাজারে দুই লাখ, ফরিদপুরে দুই লাখ, গাজীপুরে সাড়ে তিন লাখ, গোপালগঞ্জে সোয়া এক লাখ, জামালপুরে আড়াই লাখ, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ, মাদারীপুরে সোয়া এক লাখ, মানিকগঞ্জে দেড় লাখ, মুন্সীগঞ্জে দেড় লাখ, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ, নরসিংদীতে আড়াই লাখ, নেত্রকোনায় আড়াই লাখ, রাজবাড়ীতে এক লাখ, শরীয়তপুরে সোয়া এক লাখ, বান্দরবানে ৫০ হাজার, ভোলায় পৌনে দুই লাখ, ঝালকাঠিতে ৭০ হাজার, পটুয়াখালীতে দেড় লাখ, পিরোজপুরে সোয়া এক লাখ, বরগুনায় এক লাখ, বরিশালে আড়াই লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন লাখ, চাঁদপুরে আড়াই লাখ, চট্টগ্রামে তিন লাখ, কুমিল্লায় সাড়ে পাঁচ লাখ, কক্সবাজারে আড়াই লাখ, সিরাজগঞ্জে সোয়া তিন লাখ, রংপুরে তিন লাখ, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার, লক্ষ্মীপুরে পৌনে দুই লাখ, নোয়াখালীতে সোয়া তিন লাখ, রাঙামাটিতে ৬০ হাজার মানুষ টিকা পাবে।
এ ছাড়া বাগেরহাটে দেড় লাখ, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ, যশোরে পৌনে দুই লাখ, পাবনায় আড়াই লাখ, রাজশাহীতে পৌনে তিন লাখ, সুনামগঞ্জে আড়াই লাখ, সিলেটে সাড়ে তিন লাখ, ঝিনাইদহে পৌনে দুই লাখ, খুলনায় আড়াই লাখ, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ, মাগুরায় এক লাখ, মেহেরপুরে ৭০ হাজার, নড়াইলে ৮০, সাতক্ষীরায় দুই লাখ, বগুড়ায় সাড়ে তিন লাখ, জয়পুরহাটে এক লাখ, নওগাঁয় পৌনে তিন লাখ, নাটোরে পৌনে দুই লাখ মানুষসহ ৬৪ জেলায় টিকা দেওয়ার খসড়া নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এত বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুষ্ঠুভাবে টিকা বণ্টন করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবুল হোসেন মো. মঈনুল আহসান। তিনি বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই চ্যালেঞ্জ সবাইকে দিচ্ছি না। কারণ, এটা জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি না, নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য। এই অল্প কিছু মানুষকে বাছাই করা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ। এ কাজে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা বড় বাধা হতে পারে বলেও আশঙ্কা তার।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিনে সংকট নেই। তবে মানুষের একটা আস্থার ব্যাপার আছে। একটা নতুন জিনিসকে গ্রহণ করার দ্বিধা কাজ করছে এখানে। এ দ্বিধাটা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। মানুষের মাঝে আমাদের আস্থা তৈরি করতে হবে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এ আস্থা অর্জনে পরিকল্পনা হতে হবে প্রকাশ্যে। নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা। এ নিয়ে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমদ বলেন, প্রত্যেকটা পর্যায়ে টিকার কার্যক্রম প্রকাশ করতে হবে। কীভাবে বণ্টনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাও সবাইকে জানানো উচিত। এর জন্য ঊচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা বা ব্যক্তিকে প্রধান করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাকসিন-পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় শক্তিশালী টিম গঠনের তাগিদ তার।