করোনায় চাকরিহারা তরুণীদের নগ্ন ছবি বিক্রি,তাও মিটছে না অভাব

104

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জারি হওয়া লকডাউনের সময় বন্ধ হয়ে যায় শিশুদের ডে-কেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোও। তাই নিজের দুই বছর বয়সী ছেলের দেখাশোনা করার জন্য মেডিকেল বিলারের চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন সাভানাহ বেনাভিডেজ (২৩)। যুতসই নতুন কোনো কাজ না পেয়ে অবশেষে বিশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘অনলিফ্যানস’-এ অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেখানে নিজের নগ্ন বা অন্তর্বাস পরিহিত ছবি পোস্ট করে অর্থ আয় করা শুরু করেন। উল্লেখ্য, অনলিফ্যানস হচ্ছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা মাসিক সাবস্ক্রাইবারদের কাছে নিজের ‘অরিজিন্যাল কনটেন্ট’ বিক্রি করে থাকেন।
গত জুলাই থেকে ‘অনলিফ্যানস’-এ ছবি বিক্রি করে প্রায় ৬৪ হাজার ডলার আয় করেছেন বেনাভিডেজ। এতে তিনি নিজের সকল বিলতো পরিশোধ করতে পেরেছেনই, পাশাপাশি তার পরিবার-পরিজনদেরও বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পেরেছেন। বেনাভিডেজ বলেন, এই প্রথম কোনো কাজ করে আমি এত অর্থ আয় করেছি।

বেনাভিডেজের মতো অনলিফ্যানস ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের প্রত্যাশা করেছিলেন লেক্সি আজেনবার্গারও (২২)। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে তিনবার চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় তাকে।

অক্টোবরের মধ্যে নিদারুণ অর্থাভাবের মুখোমুখি হন তিনি। প্লাজমা ডোনেট করে ও এটা-সেটা বিল পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না তার কাছে। অবশেষে গত নভেম্বরে অনলিফ্যানসে একাউন্ট খোলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মটি থেকে মাত্র ৫০০ ডলার আয় করেছেন তিনি।
বৃটেন-ভিত্তিক অনলিফ্যান্স ২০১৬ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যে প্ল্যাটফর্মটির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। গত মাসে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটির বেশি। তবে কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সংখ্যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৮ গুণ বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দায় কাজ হারিয়ে, মরিয়া অবস্থায় অনেকেই উপার্জনের পথ হিসেবে প্ল্যাটফর্মটি বেছে নিয়েছে। তবে সেখান থেকে আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেনাভিডেজের মতো কেউ কেউ হয়তো প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু আইজেনবার্গারের মতো অনেকে একই আশা নিয়ে কাজ শুরু করলেও হতাশ হচ্ছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে।

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক এঞ্জেলা জোনস বলেন, এটা অত্যন্ত সঙ্কুচিত একটা বাজার। মানুষজন কেবল একটা একাউন্ট খুলেই অর্থ আয় করা শুরু করতে পারবে— এমন ধারণা খুবই ভুল।

সাধারণত মডেল, পর্ন তারকা, সেলিব্রিটিরা, যাদের আগ থেকেই অনেক অনুসারী রয়েছেন বা যাদের আগে থেকেই মানুষ চেনে, তাদের জন্য অনলিফ্যানসে অর্থ আয় সহজ। তারা সাবস্ক্রাইবারদের অর্থের বিনিময়ে এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট সরবরাহ করে থাকে। অনলিফ্যানস প্রত্যেক পেমেন্টের ২০ ভাগ কেটে নেয়। তবে অনেকে সাবস্ক্রিপশনের বাইরে অতিরিক্ত অর্থের জন্য ব্যক্তিগত মোবাইলে কনটেন্ট সরবরাহ করে থাকে। সেক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন হয় মোবাইলে অর্থ লেনদেনের কোনো অ্যাপের মাধ্যমে। ফলে এ অর্থ থেকে ভাগ পায় না অনলিফ্যানস। বেনাভিডেজ তার বেশিরভাগ অর্থ এভাবেই আয় করে থাকেন।

কিন্তু প্ল্যাটফর্মটিতে সদ্য যোগ দেওয়া ক্রিয়েটরদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি অনুসারী নেই। ফলে তাদের জন্য আয় করা কঠিন। এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন এলি মরোক্কো (৩৬)। গত জুলাইয়ে অফিস ব্যবস্থাপকের চাকরি হারানোর পর অনলিফ্যানসে যোগ দেন তিনি। কিন্তু আগ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি না থাকায় ধীরে ধীরে অনুসারির সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে তাকে। ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে নিজের ছবি পোস্ট করে সে ছবিতে লাইক দেওয়া ও মন্তব্য করা ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অনলিফ্যানসে সাবস্ক্রাইব করতে বলতেন তিনি।

মরোক্কো বলেন, একেতো কাজের সন্ধান করতে হয়। এর উপরে অনলিফ্যানসেও ফুল-টাইম কাজের মতোই সময় দিতে হয়। সাবস্ক্রাইবাররা চায় আপনি প্রতিদিন ছবি দিন।

এখন অবধি অনলিফ্যানস থেকে মাত্র ২৫০ ডলার আয় করেছেন তিনি। যদিও মাঝেমধ্যে দিনে আট ঘণ্টার বেশিও সময় ব্যয় করে পোস্ট তৈরি করেছেন। এছাড়া, তিনি আশঙ্কা করছেন, এই প্ল্যাটফর্মটিতে তার কার্যক্রম ভবিষ্যতে তার কাজ পাওয়া কঠিন করে তুলবে। অনলাইনে যৌনকর্ম করার মধ্যে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার আভাস থাকে। সরাসরি গ্রাহকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেও কর্মীরা অর্থ আয় করতে পারেন। তা সত্ত্বেও কিছু ঝুঁকি থাকে।

গত এপ্রিলে, অনলিফ্যানসে একাউন্ট থাকায় চাকরি হারান ইন্ডিয়ানার এক নারী। এছাড়া প্ল্যাটফর্মটির ব্যবহারকারীরা চাইলে ক্রিয়েটরদের হয়রানি করতে অনুমতি ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে পারে। কয়েকজন ক্রিয়েটর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণ ও প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।

(নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে অনূদিত)