বগুড়ার আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকারের জামিন

171

স্টাফ রিপোর্টার

বগুড়ায় তিন বছর আগে কিশোরীকে ধর্ষণ এবং কিশোরী ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকারকে জামিন দেওয়া হয়েছে।

রোববার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফজলুল হক শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নরেশ মুখ্যার্জি।

তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ঘটনার পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন, নরেশ মুখ্যার্জি। তিনি বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় বগুড়ার বিচারিক আদালতে তুফানের জামিন চাওয়া হলে তার জামিন মঞ্জুর হয়। তবে আমরা এই জামিনের বিরোধীতা করেছিলাম। ’

আইনজীবী সূত্র বলেছে, ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভালো কলেজে ভর্তি করবেন বলে তুফান মোবাইলে তার ওই মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই বগুড়ায় তুফানের বাড়িতে নিয়ে মেয়েকে ধর্ষণ করেন। তুফানের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে ওই ঘটনার জের ধরে ওই বছরের জুলাইয়ের ২৮ তারিখে ওই মেয়ে ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেন। বেধড়ক মারধরও করেন। ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় ২০১৭ সালের ২৮ জুলাই আলাদা ধারায় আলোচিত মামলা দুটি দায়ের করেন নির্যাতিত মেয়েটির মা। দুই মামলাতেই তুফান সরকার প্রধান আসামি।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলার তদন্ত শেষে প্রধান আসামি তুফান সরকারসহ (৩৭) ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তুফান ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলেন তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা (২০), আশার বড় বোন পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি (৩৫), আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি (৪৫), তুফানের সহযোগী মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (২৫), মুন্না (২৪), আলী আযম দীপু (২৫), মেহেদী হাসান ওরফে রুপম (২৬), সামিউল হক ওরফে শিমুল (২৫) এবং এমারত আলম খান ওরফে জিতু (২৩)। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান ওরফে রুনু (৬০), নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিনকে (২৫)।

অন্যদিকে ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনার মামলায় তুফানসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তুফানসহ ১০ জন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলাতেও অভিযুক্ত। বাকি তিনজন অভিযুক্ত হলেন তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান, নাপিত জীবন রবিদাস এবং বাদুড়তলা এলাকার আনজুয়ারা বেগম (৫৫)। অভিযোগপত্রে তুফানের সহযোগী মুন্না, আতিকুর রহমান এবং জীবন রবিদাস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াও আদালত দেওয়া নির্যাতিত মেয়েটির ২২ ধারায় জবানবন্দি, জব্দ করা আলামত, চিকিৎসকের দেওয়া সনদ, আসামিদের স্বীকারোক্তি এবং ঘটনার বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতা আমলে নিয়ে এই অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়েছে।