পৌরসভায় ‘ভোটের’ জয়,বিদ্রোহী দমনে কঠোর আ.লীগ

119

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোটারদের সরব উপস্থিতিকে ‘ভোটের মাঠে ভোটের জয়’ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এই পৌরসভা নির্বাচন স্থানীয় রাজনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন তারা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ভোট বর্জনের ঘটনা থাকলেও দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় উৎসবমুখর ভোটগ্রহণকে ‘ভোটের জয়, ভোটারদের জয়, নৌকার জয়’ মনে করছে সরকারি দল। জয়ের এ নিরঙ্কুশ ধারা পরবর্তী ধাপগুলোতেও বজায় থাকবে দাবি করে বিদ্রোহীদের দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছে। যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা নিঃসংকোচে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। গতকাল আমরা দেখেছি, ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে উৎসমুখর পরিবেশে ভোট দিচ্ছেন। ভোটের হারও অনেক উপরে। নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল থেকে যে ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে মানুষের কাছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল তাদের সেই প্রশ্ন করার সুযোগ আর থাকছে না। মানুষ নির্বাচনে আগ্রহ নিয়ে ভোট দেওয়ার নজির সৃষ্টি করেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল। কমিশন অবাধ-নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সক্ষম সেটা তারা আবারও প্রমাণ করেছে।’

কোথাও নৌকার প্রার্থী বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়েছে, আগামী ধাপগুলোতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কেমন থাকবে?- এর উত্তরে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিদ্রোহীদের ব্যাপারে আগামীতে আমাদের সিদ্ধান্ত আরও কঠিন হবে। কারণ দলের পক্ষ থেকে বারবার আহ্বান করা হয়েছে শৃঙ্খলা মানার। অতীতে বিদ্রোহীদের যে মানসিকতা গড়ে উঠেছিল- ক্ষমা পাওয়া যাবে, সেটা সামনের দিকে আর হবে না। নেত্রী বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছে। যদিও ইসি জানিয়েছে, ভোটের মাঠে প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে কেন্দ্র দখলসহ কোনো প্রকার অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয়। শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ৪৬টি, স্বতন্ত্র ৮টি, বিএনপি ৪টি, জাতীয় পার্টি ১টি এবং জাসদ ১টিতে জয় লাভ করে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয়সহ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটের মাঠে যে খরা দৃষ্টিগোচর হয়েছিল শনিবার দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে তেমন চিত্র দেখা যায়নি। ভোটররা শীতের আমেজে উৎসমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতাও হয়েছে। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিরাজগঞ্জ সদর পৌরসভায় সন্ধ্যায় ভোটের ফল ঘোষণার পর-পরই প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় নিহত হয়েছেন বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী তারিকুল ইসলাম। এছাড়াও কয়েকটি জেলার পৌরসভার ভোট কারচুপি বা অনিয়মের অভিযোগে হামলা ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক পৌরসভায় ভোট বর্জনও করেন বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থীরা।

এদিকে রোববার (১৭ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না এবং দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জয়ী হোক বা পরাজিত হোক তারা পরবর্তী নির্বাচনে আর মনোনয়ন পাবে না। এটিই আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত। পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না এবং দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করেব তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও মানবিক নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা এবং সমৃদ্ধির বিজয় বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।

১৬ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল আশাব্যঞ্জক। এদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এত ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি শেখ হাসিনা সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের অব্যাহত আস্থারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যারা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, নির্বাচন নিয়ে কথায় কথায় হতাশা প্রকাশ করে, গতকালের নির্বাচনে জনগণ তাদের উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন অভিযোগের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাহলে তাদের চারজন প্রার্থী কীভাবে বিজয়ী হলেন? বিএনপি নেতারা মাঠে না গিয়ে ঘরে বসে শীত উদযাপন করেন। ইভিএমে জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তাদের মধ্যে কোনো জড়তা ছিল না। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠাতিন হয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সর্বগ্রহণযোগ্য হয়েছে। ভোট নিয়ে বিএনপির অপপ্রচার ব্যর্থ হয়েছে। আর যারা আমাদের দলের পদ-পদবি ব্যবহারের মাধ্যমে নৌকার বিরুদ্ধে ইলেকশন করে জয়ী হয়েছেন, নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছেন তারা সবাই বিদ্রোহী। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী তারা তো দলে থাকতেই পারবে না।’ আর বিদ্রোহীদের যারা সমর্থন দিয়ে নির্বাচন করিয়েছেন তাদেরও ব্যাপারে সাংগঠনিকভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক।

সুত্র সারাবাংলা ডটকম