৩৬ লক্ষ টাকা চুরির মামলায় বগুড়ায় আলোচিত রঞ্জু ও ফটু জেলহাজতে

105

আবু সাঈদ হেলাল স্টাফ রিপোর্টার

বগুড়া দিনদুপুরে কাগজ পত্রসহ ৩৬ লক্ষাধিক টাকার চুরির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা ও মোঃ ফেরদৌস আলম ওরফে ফটুর জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত রোববার আদালতে স্বেচ্ছায় হাজিরকৃত ৬ আসামির মধ্যে ২ আসামির জামিন নামঞ্জুর ও অপর ৪ আসামির জামিনের আবেদন পুলিশ রিপোর্ট দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। গত রবিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শহিদুল ইসলাম জামিনের আবেদন শুনানী শেষে ওই আদেশ দেন। জেল হাজতে প্রেরণকৃত ওই আসামিদ্বয়ের মধ্যে শহরের কাটনারপাড়ার টিনপট্টির মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা এবং জলেশ্বরীতলার ট্রপিকাল ইলিয়াছের মৃত তবিবর রহমানের ছেলে মোঃ ফেরদৌস আল ওরফে ফটু। শহরের সুত্রাপুরের গোহাইল রোডের (রূপকথা হাউজিং ফ্লাট নং ডি-৬) এর মোঃ সামছুল হকের ছেলে এস এম আতোয়ার হোসেন মান্না কর্তৃক শাজাহানপুর থানায় ওই আসামিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১৯ ডিসেম্বর দুপুর ১টার দিকে আসামিরা শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা মোড়ে শরীফা প্রেস এন্ড পাবলিকেশন, এস আর প্রেস এন্ড পাবলিকেশন এবং দৈনিক মুক্তজমিন নামীয় পত্রিকার ছাপাখানা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে সরকারী বই ছাপানোর চুক্তিপত্র, অফিসিয়াল কাগজপত্র অফিসের আসবাবপত্র, টিভি ফ্রিজ, মালামাল ক্রয়ের নগদ ৩০ লাখ টাকাসহ ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭শ’ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
অপরদিকে, শাজাহানপুরের শাকপালা এলাকায় সরিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে চাঁদার দাবিতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে অফিস ভাঙচুর, মারপিট ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতনামাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তৎকালিন থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়া লতিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মামলা সূত্রে জানা যায়, বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মৃত মোসলেম উদ্দিনের পুত্র মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা মিয়া (৫০) ও জেলখানা মোড়ের মৃত তবিবর রহমানের পুত্র ফেরদৌস আলম ফটু (৫২) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন যুবক গত গত ২২ নভেম্বর সন্ধা সাড়ে ৭ টার দিকে শাকপালাস্থ সরিফ সিএনজির ক্যাশরুমে প্রবেশ করে সিএনজির প্রোপাইটর দেলওয়ারা বেগম ও তার জামাই বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন রানাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ বিশ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘটনার রাতেই এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরই ধারাবাহীকতায় গত ২৯ নভেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ওরফে ধলা মিয়া (৫০), ফেরদৌস আলম ফটু (৫২),কানিজ ফাতেমা পুতুল (৪০), আমেনা বেগম (৪৪), বিলকিস খাতুন (৪২) ও শান্তনা বেগম (৩৮)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন মাইক্রোবাসযোগে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন অফিসে প্রবেশ করে অফিসের রক্ষিত ক্যাশ বাক্স হতে গ্যাস বিক্রির ৪ লক্ষ সত্তর হাজার আটশত দশ টাকা লুট করে অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর করে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতি স্বাধন করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এছাড়া পুর্বে দাবিকৃত বিশ লক্ষ চাঁদার টাকা রেডি করে রাখাসহ সিএনজির প্রোপাইটর দেলওয়ারা বেগম ও তার জামাই বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন রানাকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় সরিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সহকারী ক্যাশিয়ার আব্দুল হাই বাদী হয়ে ঘটনার রাতেই শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এদিকে, বগুড়া শহরের নবাববাড়ী রোডস্থ দেলওয়ালা সেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেটের ৫মতলায় ১০ লাখ টাকা দাবী করে বিবাদীগণ না পেয়ে ম্যানাজারকে মারপিট করে হামলা চালিয়ে চেয়ার, ফুলদানী ভাংচূর করে ক্ষতি সাধন অফিসে রক্ষিত টেবিলের ড্রয়ার হতে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা জোর পূর্বক বের করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৫ জনের নামে ও অজ্ঞাত নামা আরো ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। প্রকাশ মামলার বাদী, কাটনার পাড়ার মৃতঃ আলহাজ্ব সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী মোছাঃ দেলওয়ারা বেগম তার মামলায় উল্লেখ করেন, কাটনার পাড়ার টিন পট্টির মৃতঃ মোছলেহ উদ্দিনের পুত্র মোফাজ্জল হোসেন ওরফে ধলা মিয়া (৫০), জেল খানা মোড়ের মৃতঃ তবিবর রহমানের পুত্র ফেরদৌস আলম ফটু (৫২), কাটনার পাড়ার সনজিব এর স্ত্রী মোছাঃ আমেনা বেগমম (৪৪), কাটনার পাড়ার আবুল হোসেন খোকনের স্ত্রী বিলকিস খাতুন (৪২), কাটনার পাড়া টিনপট্টির মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ধলা মিয়ার স্ত্রী শান্তনা বেগম (৪০) সহ, অজ্ঞাত নামা ৪-৫ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। বাদী তার মামলায় ২য় পৃষ্ঠায় দেখুনথউল্লেখ করেন, তার মালিকাধীন নবাববাড়ী রোডস্থ দেলওয়ালা সেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেটের ৫মতলায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অফিস রয়েছে। আসামী মোফাজ্জল হোসেন রঞ্জু ধলা মিয়া ও আমেনা বেগম বাদীর নিয়োগকৃত ম্যানাজার তৌহিদুল ইসলামের কাছে ১৩ নভেম্বর বিকাল ৫ টায় ১০ লক্ষ টাকা দাবী করে বলে ১ ঘন্টার মধ্যে টাকা পৌঁছি না দিলে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে, ম্যানেজার বিষয়টি বাদীকে জানালে বাদী ম্যানেজারকে বিবাদীগণকে টাকা দিতে নিষেধ করে। বিবাদীগণকে টাকা দিতে অস্বীকার করায় উল্লেখিত বিবাদীরা হাতে লাঠি সোটা নিয়ে বেআইনী জনতায় পূর্ব পরিকল্পিত মোতাবেক অজ্ঞাত নামা ৪-৫ জন গত বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় অনধিকার ভাবে ম্যানেজারের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে পূর্বের দাবী কৃত টাকার জন্য গালি গালাজ করে এবং বিবাদীগণ ম্যানাজার তৌহিদুল ইসলামকে এলোপাথারী ভাবে কিল ঘুষি ও চর থাপ্পর মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম করে। এ সময় বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের হাতে থাকা লাঠি সোটা দ্বারা অফিসের চেয়ার, ফুলদানী ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। ম্যানাজারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ার হতে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা ও অফিসে রক্ষিত আসবাব পত্র ভাংংচু করে।