ঠাকুরগাঁও থেকে ধরা পড়ল ভয়ঙ্কর সেই গৃহকর্মী,আনা হচ্ছে ঢাকায়

105

বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক

৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে উলঙ্গ করে পিটিয়ে বাসার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর সেই গৃহকর্মী রেখাকে অবশেষে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঢাকা থেকে সে পালিয়ে গিয়েছিল ঠাকুরগাঁওয়ে। বুধবার (২০ জানুয়ারি) গভীর রাতে শাহজাহানপুর থানার একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার পর প্রথমে ডেমরায় আশ্রয় নেয় রেখা। একটি বেসরকারি চ্যানেলে সংবাদ প্রচারের পর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাসায়। পরে রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চুরি করা টাকার মধ্যে এক লাখেরও বেশি সে ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলেছে। উদ্ধার করা হয় ৬০ হাজার টাকা, স্বর্নালঙ্কার ও মোবাইল ফোন।

গৃহকর্মী রেখাকে আজই ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। হাজির করা হবে আদালতে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃদ্ধা মাকে দেখভালের জন্য রাখা হয়েছিল গৃহকর্মী রেখাকে। সেই গৃহকর্মীর নির্মম নির্যাতনেই এখন এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই মা। ভাইরাল হওয়া এক সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা গেল, ওই বৃদ্ধাকে নগ্ন করে চরম নির্যাতন চালিয়েছে সেই গৃহকর্মী।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার সকাল সোয়া দশটা। প্রায় তিন বছর ধরে কিডনীসহ নানা সমস্যায় ভোগা বিলকিস বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন রেখা নামে গৃহকর্মী। প্রথম দেখায় যে কেউ দেখবেন, এমন চোখেই। কিন্তু না, পরম মমতার পেছনে যে কত ভয়ংকর পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিলো তা ভাবলে শিউরে উঠবে যে কেউ।

জোর করে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে ঢোকায় রেখা। এরই মাঝে খুলে ফেলে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে গৃহকত্রীকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা।

যে লাঠি বৃদ্ধ বয়সে ছিলো ভরসা, তা দিয়েই শুরু হয় মার। মার খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হননি একের পর এক আঘাত করা হয় মাথায়। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকে উপর চেপে বসে। বটি হাতেও তেড়ে আসেন রেখা। এসব কিছুর মাঝে তার লক্ষ্য আলমারি। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। গলা থেকে চেইন খুলে পরে নেয় আয়েশি ভঙ্গিতে পরখ করে নেন হাতের বালা।

তারপর আলমারির চাবির সন্ধান পায় নিষ্ঠুর এই গৃহকর্মী। কিন্তু খুলতে না পেরে রক্তাক্ত, অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল সবই হস্তগত করে রেখা।

পুরোটা সময় বিবস্ত্র বৃদ্ধা, নিজের হাতেই রক্ত থামাতে মাথায় বাঁধেন কাপড়। সব হাতানোর পর কক্ষে তালা দেয় রেখা। তারপর খুলে আনে টিভি। জোগাড় করে ব্যাগ। সবকিছু গুছিয়ে ফাকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় ভয়ংকর এই গৃহকর্মী।

আহত বৃদ্ধার বয়স ৭৫, তার ছেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক বছর আগে মাসিক ছয় হাজার টাকা বেতনে মেয়েটিকে বাসায় কাজে রাখা হয়েছিল। তার দায়িত্ব ছিল আমার বয়সী মাকে সেবাযত্ন করা।’

তাদের একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে মেয়েটি এসেছিল। সেখান থেকে পরিচয়ের সূত্রে তাকে বাসার কাজে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন বৃদ্ধার ছেলে।

সুত্র দৈনিক কালের কন্ঠ