ওসি’র জন্য মিষ্টি নিয়ে থানায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা!

110

অনলাইন ডেস্ক

মাঘ মাসের হালকা রৌদ্রজ্জ্বল পড়ন্ত দুপুরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় একটি প্যাকেট নিয়ে হাজির অসহায় জাহেদা বেগম (৪০)। প্যাকেটটি দেখেই জাহেদা বেগমকে থানার ভিতরের প্রবেশ গেটে আটকে দেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য। জানতে চান প্যাকেটে কি?

জানতে চাওয়ার সাথে সাথেই জাহেদা বেগম উত্তর দেন- মিষ্টির প্যাকেট। মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে থানায় কেন এসেছেন? এমন প্রশ্নে শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে তিনি জবাব দেন- এটা থানার ওসি স্যারের জন্য এনেছি।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তখন জাহেদা বেগমকে জানান, স্যার তো অফিসে নেই। জরুরি কাজে বাইরে গিয়েছেন। এ কথা শুনে তিনি মিষ্টির প্যাকেটটি ওসি’র কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মিষ্টির প্যাকেটটি গ্রহণ না করায়, দুই ঘণ্টা ধরে তিনি ওসির জন্য মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে থানাতেই অপেক্ষা করতে থাকেন।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) এমনই একটি আবেগ-আপ্লুত ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায়।

জানা যায়, জামালপুর ইউনিয়নের ছাবনীপাড়া গ্রামের দিনমজুর দেলোয়ার শেখের স্ত্রী নতুন ঘর তোলার জন্য বিভিন্নভাবে ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। প্রায় সাত বছর আগে সমস্যা দেখিয়ে অল্প কয়েক দিনের কথা বলে স্থানীয় দুই যুবক তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু ধার নেওয়া সেই টাকার মধ্যে মাত্র ২০ হাজার টাকা তারা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা দিতে তারা বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকলে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবেও অনেক সালিস হয়। কিন্তু কোন কাজই হচ্ছিল না জাহেদা বেগমের।

স্থানীয়দের মুখে বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুজ্জামানের সততার কথা শুনে সরাসরি থানায় চলে আসেন তিনি। তার বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে শুনে ওসি তারিকুজ্জামান অভিযোগের তদন্ত করে সতত্য পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বাড়িতে পুলিশ পাঠালে জাহেদা বেগমকে টাকা পরিশোধ করে দেয় তারা।

আর এতেই মহাখুশি হয়ে অসহায় দরিদ্র জাহেদা বেগম ওসি’র জন্য মিষ্টি নিয়ে চলে আসেন থানায়। একজন দরিদ্র মানুষের এই কৃতজ্ঞতাবোধের কাছে হার মেনে যায় থানার সকল পুলিশ সদস্য। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন- এই মিষ্টি গ্রহণ করার।

সেই মিষ্টি থানায় আগত সকল সেবাপ্রত্যাশী ও পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুজ্জামান জাহেদা বেগমের হাতেও তুলে দেন বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে একটি গিফট বক্স।

জাহেদা বেগম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি গরিব মানুষ। সাতটি বছর ধরে ওরা আমাকে ঘুরিয়েছে। ১০ হাজার টাকা মানে আমার কাছে কোটি টাকা। ওসি স্যারের কাছে বলার পরই স্যার আমাকে টাকাটা তুলে দিয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি। তার জন্য দোয়া করি।

বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। তাছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা বিভাগের ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান স্যারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানবিক পুলিশ তৈরি করতে কাজ করছি মাত্র। এটিও তারই একটি অংশ।

সাধারণ মানুষের এ ধরনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আগামী দিনে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও ওসি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক মাস আগে বালিয়াকান্দিতে যোগদান করা ওসি তারিকুজ্জামান এরই মধ্যে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় তিনি থানাকে সত্যিকারের জনবান্ধব থানা হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সুত্র বার্তা২৪