পাকিস্তানি যেকোনো এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ না করতে স্টাফদের প্রতি জাতিসংঘের নির্দেশনা

106

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

পাকিস্তানি যেকোনো এয়ারলাইন্সের বিমানে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠনের স্টাফদের সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি পাকিস্তানি পাইলটদের লাইসেন্স কেলেঙ্কারির পর এমন সতর্কতা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে বিমান চালানোর জন্য বেশ কিছু পাইলটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমনটা হয়েছে দেশে ও দেশের বাইরে। জাতিসংঘ এক্ষেত্রে একটি বিবৃতিতে পাকিস্তানের ১৪টি বিমান সংস্থার নাম উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ)। এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিম্পল ফ্লাইং। এতে বলা হয়, ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি ম্যাসেজ সিস্টেমের এ বিষয়ক এক উপদেশ দেখতে পেয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। তাতে জাতিসংঘ তার কর্মীদের পাকিস্তানে নিবন্ধিত এমন যেকোনো বিমানে আরোহণ না করতে কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে।
এর অর্থ হলো পাকিস্তানে অবস্থানরত জাতিসংঘের স্টাফরা তালিকায় বর্ণিত ওইসব বিমান সংস্থার কোনো বিমানে করে আন্তর্জাতিক বা আভ্যন্তরীণভাবে সফর করতে পারবেন না। এর ফলে ভবিষ্যত পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে এক সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণ ব্যাখ্যা করে ওই এডভাইজরিতে বলা হয়েছে, সিভিল এভিয়েশন পাকিস্তানের চলমান তদন্ত এবং সন্দেহজনক লাইসেন্স নিয়ে সতর্কতায় বলা হয়েছে- পাকিস্তানে নিবন্ধিত অপারেটরদের ব্যবহার করা যাবে না। এখানে উল্লেখ্য, যেসব বিমান সংস্থাকে ওই তালিকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার সবটাই পাকিস্তানে নিবন্ধিত। এমন বিমান সংস্থার সংখ্যা মোট ১৪। এর মধ্যে রয়েছে পিআইএ, সেরেনে এয়ার, এয়ার ব্লু প্রভৃতি। এর ফলে পাকিস্তানের সরকারি বিমান সংস্থা পিআইএ সহ অন্যরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের কিছু পাইলটের লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে বেশ কিছু দেশ ব্যবস্থা নিয়েছে। অবশেষে এর সঙ্গে যুক্ত হলো জাতিসংঘ। উল্লেখ্য, গত জুনে পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী গোলাম সারওয়ার খান বলেন, পাকিস্তানের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ পাইলটের রয়েছে ভুয়া লাইসেন্স। তারা বিমান চালানোর জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন নন। তার এমন স্বীকারোক্তি বিশ্বজুড়ে বেসামরিক বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে একটি হতাশার সৃষ্টি করে। বৃদ্ধি পায় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে ভয়াবহ এক আতঙ্ক। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশটির সরকারি বিমান সংস্থা পিআইএ দ্রুততার সঙ্গে তার মোট ৪৩৪ জন পাইলটের মধ্য থেকে ১৫০ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া লাইসেন্স ব্যবহারের অভিযোগ আছে। এর অর্থ হলো পাকিস্তানের শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ পাইলট বিমান চালাতে যোগ্যতা রাখেন না।

তারপর থেকে এই বিমান সংস্থাটি কয়েক ডজন পাইলটকে বরখাস্ত করে। তবে তার ভিতর থেকে অল্প কয়েকজনকে আবার পুনর্বহাল করে। কিন্তু পরিস্থিতি সেখানেই থেমে থাকেনি। এ সমস্যা দ্রুততার সঙ্গে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রকদের দৃষ্টি কাড়ে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এয়ার সেফটি এজেন্সি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আকাশসীমায় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সকে নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে কমপক্ষে ৬ মাস। এমনকি তারা পাকিস্তানি পাইলটদের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিতের সুপারিশ করে। নামিয়ে দেয়া হয় পাকিস্তানের বিমান সংস্থাগুলোর রেটিং।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করেনি পিআইএ। তবে সেপ্টেম্বরে তারা এর পরিবর্তে পাইলটদের নিয়ে যে কেলেঙ্কারি, সেদিকে দৃষ্টি অব্যাহত রাখে। তখন থেকেই পাকিস্তানের বিমান সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে কয়েক মাস নিষিদ্ধ ছিল। পরে তা আবার বাড়ানো যেতো। পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান সংস্থা এবং পিআইএ নিরাপত্তা ইস্যুতে কঠোরতা অবলম্বন এবং তা যাচাই করার বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ফিরতে পারবে না।