৭১ বছর পর ভারতে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে এক নারীর

135

অনলাইন ডেস্ক
ভারতে প্রায় সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। পরিবারের সাত সদস্যকে খুন করায় তার এ সাজা হয়।

অভিযোগের বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ১৩ বছর আগে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান উত্তর প্রদেশের বাওয়ানখেদি গ্রামের শবনম নামে এ গৃহবধূ। প্র্রেমে বাধা দেওয়ায় প্রেমিককে নিয়ে এই হত্যাযজ্ঞে মেতে ওইনের শবনম।

পুলিশ পরে এই খুনের অভিযোগে শবনম এবং তার প্রেমিক সেলিমকে গ্রেপ্তার করে। বিচারে তারা দুজনই দোষী সাব্যস্ত হন। আদালত তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রাণদণ্ডের আদেশ দেয়।

শবনমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ১৯৫৫ সালের পর ভারতে এই প্রথম কোনো নারী ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলবে। যদিও শবনম কখনওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

শবনমের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেন রাষ্ট্রপতি। যদিও শবনমের শিশু সন্তান রাষ্ট্রপতির কাছে মায়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শবনমের আইনজীবীরা তার ফাঁসি ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি, শবনম নিজেও ওই ঘটনার শিকার।

হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল রাতে। রায় হয় ২০১০ সালে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেদিন বাওয়ান খেরি গ্রামের বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙে এক নারী কণ্ঠের আর্তচিৎকারে।

লতিফ উল্লাহ খান নামে এক প্রতিবেশী সবার আগে শওকত আলীর দোতলা বাড়িতে পৌঁছান এবং শওকতের মৃতদেহের পাশে শবনমকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন।

সে সময় ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল, শওকতের মাথা ধড় থেকে প্রায় আলাদা হয়ে ছিল।

সেদিন শবনমের দুই ভাই, মা, ভাবি, ১৪ বছরের কাজিন, এমনকি তার ১০ মাসের ভাইপোর মৃতদেহও সেখানে পড়েছিল। বেশিরভাগ মৃতদেহের মাথা ছিল ঘাড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।

হত্যাকাণ্ডের সময় শবনম ৮ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্ত্বা ছিলেন। তার গর্ভে ছিল প্রেমিক সেলিমের সন্তান। ঘটনার আট মাস পর কারাগারেই ছেলের জন্ম দেন শবনম। বর্তমানে তার ছেলে বিট্টুর (ছদ্মনাম) বয়স ১২ বছর। বিট্টু তার পালক পিতার কাছে বড় হচ্ছে।

বিট্টু ভারতের প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোভিন্দের কাছে তার মায়ের প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আবেদন করবে বলে জানানো হয়েছে সিএনএন এর প্রতিবেদনে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। আদালতের নথির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় শবনম তার পরিবারের জন্য চা বানায় এবং তাতে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়।

চা পান করার পর পুরো পরিবার অচেতন হয়ে পড়ে। তখন সে প্রেমিক সেলিমকে বাড়িতে ডেকে নেয় এবং কুঠার দিয়ে সবার গলা কাটে।

হত্যাকাণ্ডের পরদিন বিলাল আহমদ নামে এক চা দোকানির কাছে সেলিম এসব কথা স্বীকার করে বলে আদালতে সাক্ষ্য দেন বিলাল।

বিলাল জেলা পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করেন। বিলাল আদালতে বলেন, ‘সেলিম আমাকে বলেছে, শবনম একজনের পর এক জনের মাথা চেপে ধরেছে এবং তাদের গলা কেটে হত্যা করেছে।

সেলিম কেন এ ঘটনা জানাল সেটির ব্যাখ্যায় বিলাল বলেন, আমার সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ আছে। তাই সেলিম আমাকে এসব বলে তাকে শাস্তি পাওয়া থেকে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিল।

আদালতের নথি অনুযায়ী, সেলিমকে গ্রেফতারের পর একটি পুকুর থেকে রক্তমাখা কুঠার উদ্ধার করা হয়। আদালতে যেটি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, শবনমের কাছ থেকে ঘুমের ওষুধের খালি প্যাকেটও উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রথমে শবনমের দাবি, তাদের বাড়িতে ডাকাত ঢুকে সবাইকে খুন করেছে। পরে অবশ্য সে সেলিমের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে।

কিন্তু পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাড়ির উঁচু ছাদ বেয়ে ভেতরে ঢোকা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া লোহার তৈরি বাড়ির প্রধান দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত কারও আঙুলের ছাপ বা এই জাতীয় কিছুও পাওয়া যায়নি, যাতে ডাকাতদের উপস্থিতির প্রমাণ হয়।

শবনমের বাবার মৃতদেহের পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার ব্যাখ্যায় ২০১৫ ‍সালে আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল। ‘শবনম তার বাবার রক্তাক্ত মৃতদেহের পাশে অজ্ঞান হয়ে থাকার ভান করে পড়েছিল। যাতে মনে হয়, বাইরের কেউ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে’।

সাক্ষীদের বয়ান এবং আদালতে উপস্থাপন করা তথ্যানুযায়ী, শবনম এবং সেলিম দুজনে মিলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। কিন্তু তারা দুজন এ কথা স্বীকার করেনি। বরং জিজ্ঞাসাবাদে দুইজন পরষ্পরের দিকে আঙুল তুলেছে।

শবনম বলেছেন, সেলিম একা সবাইকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে সেলিম বলেছেন, শবনম সবাইকে হত্যা করার পর তাকে ডেকেছে প্রমাণ নষ্ট করার জন্য।

২০১০ সালে ১৪ জুলাই জেলা ও দায়রা আদালত এই প্রেমিক যুগলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে তারা প্রথমে উত্তর প্রদেশ হাই কোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।

কিন্তু উভয় আদালতেই জেলা আদালতের রায় বহাল থাকে। পরে শবনমের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেন রাষ্ট্রপতিও। ফলে ফাঁসির সাজা বহাল থাকায় মথুরা জেলে শবনমের প্রাণদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও ফাঁসির দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।।