শাজাহানপুরে নেপথ্যের ৩য় পক্ষের উস্কানিতে অস্থির ফুলকোট গ্রাম

741

প্রতিনিধি, শাজাহানপুর(বগুড়া)ঃ বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী ফুলকোট বামনদীঘি পাড়া। এক সময় মাদক এবং জুয়া মুক্ত পরিচ্ছন্ন গ্রাম হলেও গত ৫বছর ধরে সেখানে ঢুকেছে মাদক। জুয়ার আসরও বসে কখনো কখনো। বর্তমানে এ নিয়ে গ্রামের পক্ষে বিপক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

নারীর শ্লীলতাহানি সহ নানা ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় উভয় পক্ষের একাধিক অভিযোগ সহ আদালতে মামলাও হয়েছে। নেপথ্যের তৃতীয় একটি অপশক্তি কলকাঠি নেড়ে পরিবেশ উস্কে দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা বলছেন।

সম্প্রতি ওই গ্রামের মৃত মনছের আলীর ছেলে মানিক(৩৫) একটি বাড়ির ভিতরে ডাবু জুয়া চালাচ্ছেন এমন সংবাদে অভিযান পরিচালনা করেন থানা পুলিশ। একই গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ইমদাদুল হক(৩৩) পুলিশ ডেকে আনে বলে মানিক ক্ষুব্ধ হয়। এরপর উভয়ের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেয়।

সরেজমিনে ইমদাদুল হক জানান, সম্প্রতি ফুলকোট গ্রামের একটি বাড়িতে রাতে মানিক এবং তার সহযোগীরা জুয়ার আসর বসায়। সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এই ঘটনার পর মানিক আমার উপরে ক্ষুব্ধ হয়। আমাকে মারার জন্য তার সহযোগীদের নিয়ে সংগঠিত হয়। গ্রামের লোকজন তখন গনস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বগুড়া পুলিশ সুপার এবং বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে দেন।

মানিকের প্রকাশ্য কোন আয় নেই। অপরাধের টাকায় মানিকের সংসার চলে। অভিযোগ করায় মানিক আমার উপরে আরো ক্ষুব্ধ হন।

কিছুদিন আগে আমার সন্তানের অকিকা করি। এসময় আমার বোনের স্বামী গ্রামে সেই মাংস বিতরণের সময় মানিক এবং তার সহযোগীরা আমার বোন জামাইকে মেরে আহত করে এবং হত্যা চেস্টা করে। আমার বোন এগিয়ে গেলে তাকেও শ্লীলতাহানি এবং ধর্ষন চেস্টা করে মানিক এবং তার সহযোগীরা। এই ঘটনায় আমি থানা পুলিশের সাহায্য চাই। পুলিশ এসে আমার বোন জামাই সহ মানিককে ধরে নিয়ে যায়।

আমার বোনের দেয়া অভিযোগ থানায় গ্রহন না করে মানিক এবং আমার বোন জামাইকে পরদিন ১৫১ধারায় আদালতে প্রেরণ করেন পুলিশ।

প্রতিকার পেতে আমি বগুড়া পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করি এবং বোনকে ধর্ষন চেস্টার অপরাধে আদালতে মামলা করি। আদালত মামলাটি পুলিশ বূরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ৩য় পক্ষের উস্কানিতে মানিক থানায় আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন। আমাকে মাদক ব্যবসায়ীর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আপবাদ দিচ্ছেন।

মানিক জানান, আগে সেনাবাহিনীর চাকরি করতাম। এক বছর জেল খাটার পর চাকুরি চলে যায়। ইমাদাদুল মাদক ব্যবসা করে কী না তা তার জানা নেই। গ্রামবাসি অভিযোগ দিয়েছে সেই অভিযোগ আমি এবং আমার স্ত্রী সন্তান সহ পরিবারের লোকজন গিয়ে থানায় দিয়েছি। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইমাদাদুল হক ইউপি সদস্য প্রার্থী। আরো অনেক প্রার্থী আছে। নেপথ্যের কারো উস্কানিতে কোন কাজ করছিনা।

মানিকের পক্ষে গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে নাম থাকা মৃত লাদুর ছেলে ভ্যান চালক মাসুদ সহ বেশ কয়েকজন আজকের পত্রিকাকে জানান, ইমদাদুল মাদক ব্যবসা করেন এমনটা কখনো শুনিনি। অভিযোগের বিষয়ে তার জানানেই। স্বাক্ষর আমার নয়। আমার জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে কেউ ইমাদুলকেকে ফাঁসানোর চেস্টা করছেন। মানিকের অভিযোগে স্বাক্ষর করা আরেক জন জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইমদাদুল মাদক বিক্রি করে এমনটা তিনি শুনি নাই। শুধু সত্য দিয়ে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়না তাই কিছু মিথ্যা ঢুকেছে। তবে ইমদাদুলের সাথে আমার জমি সংক্রান্ত বিরোধ আছে।

মানিক এবং সরকার দলের স্থানীয় এক নেতা তাকে স্বাক্ষর দিতে বলায় আমি দিয়েছি। মানিক কী করে তা জানিনা তবে ঘুরে বেড়ায় শুনেছি।

ফুলকোট গ্রামের মসজীদ কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক এবং ঈদগাহ মাঠ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মঞ্জু জানান, ফুলকোট বামনদীঘি গ্রামটি মাদক এবং জুয়া মুক্ত পরিচ্ছন্ন একটি গ্রাম ছিলো। গত ৫বছর ধরে এই এলাকায় মাদক ঢুকেছে এবং মাঝে মধ্যে জুয়ার আসর বসার খবর পাই। জুয়া বন্ধে কেউ কেউ প্রতিবাদ করে। এতে গ্রামে পক্ষ বিপক্ষ দেখা দিয়েছে। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নেপথ্যের ৩য় একটি পক্ষ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিপথগামীদের উস্কে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে এখানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। ৩য় পক্ষকে থামানো না গেলে আবারো সংঘর্র আশংকা থেকেই যাবে।

ফুলকোট মাজারতলা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, ইমদাদুল মাদক ব্যবসা করেনা। মানিক মাঝে মধ্যে জুয়া চালায় শুনেছি। ৩য় পক্ষ নির্বাচনকে ঘিরে পরিবেশ উত্তপ্ত করে ফায়দা লোটার চেস্টা করছেন।

একই গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার দলের স্থানীয় এক নেতা পুরো গ্রাম অস্থির করে রেখেছেন। পুলিশের সাথে ওই নেতার গভীর সখ্যতা রয়েছে। গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন থানায় মামলায় ফাঁসিয়ে থাকেন ওই নেতা। ফুলকোট গ্রামের আজকের পরিস্থিতি তারই সৃস্টি।

শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম নয়ন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইমাদাদুল এবং মানিকের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। কে কোথায় অভিযোগ দিয়েছে না দিয়েছে তাও জানিনা।

শাজাহানপুর থানার এসআই শামীম হাসান জানান, পরিবেশ আপাতত শান্ত আছে। ওই এলাকা কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।