শিবগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে ২শ বছরের ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবে মাছের মেলা

205

রশিদুর রহমান রানা শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ নবান্ন উপলক্ষে বিশাল এক মাছের মেলা সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ যেমন সিলভার কার্প, কাতল, চিতল, রুই, গ্লাসকার্প, ব্রিগেড, বাঘাইড়, বোয়াল মাছ সারিবদ্ধভাবে রেখেছে দোকানে। চলছে হাঁকডাক, দরদাম। এই মাছের মেলা গুলোতে ১কেজি থেকে ২৫কেজি ওজনের মাছ রয়েছে। মেলার আশেপাশ ও দুর দুরান্ত থেকে আগত ক্রেতারা ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে ক্রয় করছেন এসব মাছ। আবার মেরায় মাছ দেখতেও এসেছেন অনেকেই।
পঞ্জিকা অনুসারে আজ এ দিনেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই শস্যোৎসব পালন করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। নবান্ন উৎসব বলতে নতুন আমন ধান কাটা। সেই ধান থেকে প্রস্তুতকৃত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হরেক রকম মাছের ক্রয়-বিক্রয়।

নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি জাতি-ধর্ম-বর্ণকে উপেক্ষা করে নবান্নকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে ওঠে। সামাজিক প্রথা, রীতি ও কৃত্যের পরিক্রমায় স্থানবিশেষে মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী অগ্রহায়ণ অষ্টম মাস হিসেবে বিবেচিত হলেও হেমন্ত ঋতুর দ্বিতীয় এ মাসের প্রথম দিনটিই বাংলাদেশের নবান্ন। বাংলার ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করার জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নতুন চালের পিঠা ও পায়েস রান্না করে ধুমধামের সঙ্গে ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। গ্রামের বধূরা অপেক্ষা করেন বাপের বাড়িতে নাইওরে গিয়ে নবান্ন যাপনের জন্য। পিঠা, পায়েস, মুড়ি-মুড়কি আর নতুন চালের ভাতের সুগন্ধে ভরে ওঠে মন।

এছাড়া মেয়ে-জামাই ও অন্যান্য আতœীয় স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে এসে বাহারি পিঠা-পায়েসসহ নানা রকমের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। পঞ্জিকা অনুসারে বৃহস্পতিবার পহেলা অগ্রহায়ণ হওয়ায় এ এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব পালন করছে। এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মাছের মেলা বসে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।

সরেজমিনে উপজেলার, ঐতিহাসিক মহাস্থান বাজার, উথলী বাজার ও মোকামতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সারি সারি মাছের দোকান। সেখানে থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড, আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। লোকজন ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ।

 

মাছ বিক্রেতা পুলক বলেন, নবান্ন উৎসবকে ঘিরে বড় বড় মাছ বাজারে বিক্রি করতে এনেছি। আমার দোকানে এবার ৮-১০ কেজি ওজনের বিগহেড মাছ রয়েছে। এছাড়া বড় বড় রুই ও কাতলা মাছ আছে।

দোকানি বাদশাহ মিয়া জানান, মাছের আকার ভেদে বিভিন্ন দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে। বিগহেড ও সিলভার কাপ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, রুই ও কাতলা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ও বোয়াল ৫৫০- থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছ কিনতে ফনী মোদক বলেন, হিন্দুদের এই নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বাজারে বড় বড় মাছ আসে। আমি ১০ কেজি ওজনের একটি বিগহেড মাছ কিনেছি। বিগহেড, সিলভার কার্প, রুই, কাতলাসহ সবধরনেরর মাছের দাম বেশি।