নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার মগলিশপুর গ্রামে বিরাট ‘মাছের’ মেলা

221

রাশেদ স্টাফ রিপোর্টার

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়া সদরের মগলিশপুর গ্রামে বিরাট মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়। নবান্নের কথা বলতে গেলে প্রথমে উঠে আসে অগ্রহায়ণ মাসের কথা। মনে পড়ে বাংলা উৎসবের সাথে মিশে থাকা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায় এই নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন। নতুন ধান কাটা আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। বাঙালিদের বিচিত্র অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হলেও নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব।

এই নবান্ন উৎসবকে বাঙ্গালীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই মাছের মেলা প্রতিবছর বসে পয়লা অগ্রহায়ণে। তবে তারিখটি সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি মেনে নয়, পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি ধরেই তাদের পূজা-উৎসব ও পার্বণের দিনক্ষণ ঠিক করে। ওই পঞ্জিকা অনুসারে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) পহেলা অগ্রহায়ণ। নবান্ন উৎসব ১৪২৮ উপলক্ষে বগুড়ার মগলিশপুর কাঁচা বাজারে বিরাট মৎস্য মেলার আয়োজন করা হয়।

সকাল সাড়ে ৭টায় মাছহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোরবেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেছে মেলায়, কাতলা, চিতল, সিলভার র্কাপ, ব্লাডর্কাপ বিগহেড, চিতলসহ হরেক রকমের মাছ। চলছে হাঁকডাক, দরদাম, এক কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের মাছ আছে এই মেলায়। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ।

বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী এ মাছের মেলা বসেছে এ বাজারে। নবান্ন উৎসবেকে ঘিরেই প্রতি বছর মাছের মেলা বসে এ বাজারে। বিভিন্ন এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে এ উৎসবের আমেজ যেনো অংশে পরিনত হয়েছে। পরিবারের অভিভাবকেরা তো কিনছেনই তার পরেও মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের বাড়িতে মাছ পৌছে দিতেও দেখা গেছে।

বিশালাকৃতির একটি মাছ হাতের ওপর তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন শাখারিয়া ইউনিয়নের মধ্যকাতুলি গ্রামের মাছ বিক্রেতা রতন চন্দ্র দাস। তিনি ১৫ কেজি ওজনের ব্লার্ডকার্প মাছটির দাম হাঁকেন ১০ হাজার টাকা। পরে সে মাছ তিনি বিক্রি করেন ৭ হাজার ৫০০ টাকায়।

ক্রেতাদের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকা থেকে এসে ১৫ কেজি ওজন ৭হাজার ৫০০ টাকায় ব্লার্ডকার্প মাছ কিনেছেন কবির হোসেন। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বারের চেয়ে এবার মাছের দাম একটু কম এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। এদিকে মগলিশপুর গ্রামের সাগর তালুকদার সাড়ে ১৪ কেজি ওজনের বিগহেড কিনেছেন ৭হাজার টাকা দিয়ে, দামের কথা জানতে চাইলে, দাম চড়া বলে তিনি অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।

মাছ কিনতে আসা বগুড়া মগলিশপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী বিপ্লব চন্দ্র দাস বলেন, এই মাছের মেলায় এসে সাড়ে ৭ কেজি ওজনের রুই মাছ ৩ হাজার টাকায় কিনেছি।

মেলা দেখতে আসা মিন্টু মিয়া বলেন, মেলায় মাছ দেখতে এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম একটু বেশি। কিন্তু এবার মেলায় সুন্দর সুন্দর বড় মাছ উঠেছে, দেখতে বেশ ভালো লাগছে।

মেলার মাছ ব্যবসায়ী নাথুরাম সরকার বলেন, কাতলা বড় মাছ ৭০০ টাকা কেজি, ৫ কেজি ওজনের রুই মাছ ৬০০ টাকা কেজি, রুই ছোট ৩৫০/৪৫০ টাকা কেজি, ব্রিগেট বড় ৩০০ টাকা কেজি ও হাঙ্গেরি মাছ বড় ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ ছাড়া আমার দোকানের সেরা ছিল ৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ, ৮ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি।

এছাড়াও মেলার অন্যান্য মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিগহেড ও সিলভার কার্প বিক্রি হচ্ছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে।।