পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বার বার ব্যার্থতা

শাজাহানপুরে এক যুগের বেশি সময় ধরে দল চালাচ্ছে সুপার আর আহব্বায়ক কমিটি

178

বিশেষ প্রতিনিধি, শাজাহানপুর(বগুড়া)ঃ আহŸায়ক এবং বিভিন্ন সদস্যের সুপার কমিটি দিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলছে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বার বার ব্যার্থ হচ্ছেন।

দলটির অনেক নেতা কর্মী মনে করছেন এই অবস্থার কারণে ক্রমেই সাংগঠনিক শক্তি হারাচ্ছেন তারা। ইতি মধ্যে কেউ কেউ দল ত্যাগ করেছেন। মামলা হামলার শিকার হয়েও জায়গা না পাওয়ায় দলের একটা বড় অংশ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। উপজেলায় সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একটা বড় অংশ সরকার দলের পক্ষে প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন।

জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অবৈধ হস্তক্ষেপে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যার্থতার প্রধান কারণ বলে মনে করছেন উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকেই।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী হায়দার তোতা জানান, ২০১১সাল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর উপজেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে ফজলুল হক রতনকে আহŸায়ক করে কমিটি ঘোষনা হয়। সেই সময় ফজলুল হক রতনের মৃত্যুর পর কমিটির আহŸায়কের দায়িত্ব নেন আবুল বাশার। এই কমিটি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনাই।

২০১৯সালে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে আব্দুল হাকিমকে আহŸায়ক এবং বজলুর রহমান নিলুকে যুগ্ন আহŸায়ক করে নতুন একটি কমিটি ঘোষনা হয়। সেই কমিটি এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এই কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনাই।

উপজেলা ছাত্রদলের সুপার ফাইভ(পাঁচ সদস্য বিশিস্ট কমিটি) কমিটির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন বাবু জানান, সর্বশেষ ২০০৫সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রদলের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এনামুল হক এনাম। এরপর থেকে সুপার ফাইভ এবং আহŸায়ক কমিটি দিয়ে চলে আসছে। তার কমিটির পরে সুপার ত্রি(৩) কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যার্থ হয়। সম্প্রতি উপজেলা ছাত্রদলের সুপার টু(২) কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উপজেলা যুবদলের সাবেক সুপার ফাইভ(৫) কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, ২০০৩সালে উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক কমিটির আহŸায়ক ছিলেন আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ এবং সিনিয়র যুগ্ন আহŸায়ক ছিলেন ইদ্রিস আলী সাকিদার। ২০০৫সালে তাদের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক করে সুপার থ্রি(তিন সদস্য বিশিস্ট) কমিটি গঠন হয়। সেই কমিটির মেয়াদ ছিলো মাত্র ৫দিন।

এরপর ইদ্রিস আলী সাকিদারকে সভাপতি এবং এনামুল হক এনামকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার টু(দুই সদস্য বিশিস্ট) কমিটি গঠন হয়। এই কমিটি উপজেলার কিয়েকটি ইউনিয়নে সুপার ত্রি(তিন সদস্য বিশিস্ট) কমিটি তৈরি করেন। ২০০৯সাল পর্যন্ত এই কমিটি দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯সালে এনামুল হক শাহীনকে আহŸায়ক করে উপজেলা যুবদলের আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে এনামুল হক শাহীনকে সভাপতি এবং সুলতান আহম্মেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫সুপার ফাইভ কমিটি গঠন করে দলটি। ২০২১সালে ওই কমিটি বিলুপ্ত করে রাজু আহম্মেদকে আহŸায়ক, ৭জন যুগ্ন আহŸায়ক এবং ২৩জন সদস্য সহ মোট ৩১সদস্য বিশিস্ট আহŸায়ক কমিটি গঠন হয়।

জানতে চাইলে গোহাইল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মতিন কাজী বলেন, উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বে দূর্বলতার কারণে সাংগঠনিক শক্তি হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে পকেট কমিটি দিয়ে দল চলছে।

কর্মীদের কে কার লোক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন নাই। দলের জন্য মামলা হামলার শিকার হলেও কর্মীদের কমিটিতে রাখা হয়না।

মূলত পকেট কমিটির লোকজন সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করেছে। দলের কোন কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়না। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বহু বছর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণঙ্গ কমিটি নাই। এভাবে চলতে চলতে দলের আজ এই অবস্থা।

উপজেলা বিএনপির সাবেক আহŸায়ক আবুল বাশার বলেন, উপজেলা বিএনপির অনেকেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি করার ফলে এটি হচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছিলাম। গঠন করা কমিটির উপরে জেলার নেতারা ঢাকায় যোগাযোগ করে আবারো অন্য নির্দেশনা নিয়ে আসেন।

মূলত জেলা কমিটি উপজেলা কমিটি গঠন করে দিবে। উপজেলা কমিটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করবে। কিন্তু উপজেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা দায়িত্বে থাকা জেলার নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়না।

উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক শাহীন বলেন, দলের কোন নেতা কর্মী আওয়ামীলীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির আহŸায়ক আব্দুল হাকিম বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, কমিটি করার ব্যার্থতা রয়েছে এটা সত্য। বিএনপির অকেইে আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করেছেন এটাও সত্য। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না থাকায় উপজেলা বিএনপি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারেনাই।