শেরপুরে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র বলাৎকার

200

মোঃ জাকির হোসেন উপজেলা প্রতিনিধি (শেরপুর, বগুড়া)

‘আমাক ম্যারা ফেলা দেওয়ার ভয় দেখাছিলো। আর কেউ ভয় দেখায়নি, খালি এরশাদ হুজুরই ভয় দেখাছিলো’। কথাগুলো বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বলাৎকারের শিকার ১১ বছর বয়সী ছাত্র আশিকের (ছদ্মনাম)। বগুড়ার শেরপুরের মদনপুর দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এরশাদ হুজুরের সম্বন্ধে কথাগুলো বলছিল সে।

এরশাদ হুজুরের বাড়ি ধুনটের চালাপাড়া এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্র আশিককে একাধিকবার বলাৎকার এবং মুখ খুললে বেত্রাঘাত করে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগীর মা-বাবার অভিযোগ, গত কয়েক মাসে তাঁদের ছেলেকে কয়েকবার বলাৎকার করা হয়েছে। কাউকে কিছু বলতে না পেরে সে প্রায়ই বাড়িতে চলে আসত। বাড়িতে চলে আসার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে কিছুই বলতে চায়নি; শুধু বলেছে হুজুর মারধর করে। পরে আবার বুঝিয়ে মাদ্রাসায় পাঠানো হতো। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর সে বাড়ি এলে কারণ জানতে চাপ দিলে ঘটনা খুলে বলে।

এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে মাদ্রাসায় গিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে উধাও হয়ে গেছেন। ওই ঘটনার পর মাদ্রাসার ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন বাড়িতে চলে গেছে বলে জানান মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে দুই মাস হলো এসেছি। এরশাদ হুজুর এখানে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে দায়িত্বে আছেন। আশিকের সঙ্গে অনৈতিক কার্যক্রম দেখে ফেলেছিল মাদ্রাসার আরেক ছাত্র। পরের দিন শুক্রবার সে বাকি ছাত্রদের ঘটনা জানিয়ে বাড়িতে চলে যায়। এরপরই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায় এবং বেশির ভাগ অভিভাবক সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যান।’

এদিকে এরশাদ হুজুরের অনুপস্থিতিতেই এই ঘটনা মীমাংসা ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন এলাকার কিছু লোক। ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি, সেক্রেটারিসহ এলাকার কিছু লোক বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তাঁরা সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়ে তাঁরা আইনের আশ্রয় নিতে সাহস করছেন না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ছাত্র বলাৎকারের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সেক্রেটারি আব্দুল লতিফ বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এরশাদ হুজুর এ ধরনের কাজ করতে পারেন বলে তাঁর বিশ্বাস হয় না। বিষয়টির সঙ্গে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম জড়িত বিধায় বেশি ঘাঁটাঘাঁটি না করার পরামর্শও দেন তিনি। তাঁর কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের মোবাইল নম্বর চাইলেও তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

মাদ্রাসাটির সাবেক সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি, আমিই প্রথম এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমার সঙ্গে বনাবনি না হওয়ায় আমি সরে এসেছি।’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মমতাজ বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটায় মাদ্রাসাটি একদম ধ্বংস হয়ে গেল। মাদ্রাসায় তালা মেরে হুজুর চলে গেছে। আমরা তাঁকে আনার চেষ্টা করছি।।’

এ বিষয়ে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সঠিক হলে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’