একজন মানবিক সুমনের কথা

157

মো. জাকির হোসেন শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ছোটফুলবাড়ী গ্রামের এই তরুণের নাম মোঃ তাওহীদুল ইসলাম সুমন, তিনি বর্তমানে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) তে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। এই তরুণ এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে যেমন পরিচিত তার চেয়েও বেশি পরিচিত এলাকার একজন মানবসেবী হিসেবে। বিভিন্ন ধরনের মানবকল্যাণ মূলক এবং সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডে রয়েছে যার সক্রিয় অংশগ্রহণ।
এলাকার মানুষের যেকোন প্রয়োজনে সবার আগে তাদের কাছে স্মরণীয় মুখ তাওহীদুল ইসলাম সুমন, তিনিও এলাকার মানুষকে ভালবেসে তাদের যেকোন প্রয়োজনে সবসময় তাদের পাশে থাকেন, এলাকার মানুষও তাই সবসময় অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, মেধাবী এবং মানবসেবী এই তাওহীদুল ইসলাম সুমন কে ভালবেসে তাদের যেকোন প্রয়োজনে পরামর্শ এবং সহযোগিতার জন্য তাকে স্মরণ করেন। তাওহীদুল ইসলাম সুমন সালমা নামের একটি অসহায় মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে মানব সেবায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এছাড়াও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় তিনি এগিয়ে এসেছেন, হাটগাড়ি এলাকায় পূর্বে একটি মাটির রাস্তা ছিল বর্ষাকালে এলাকাবাসীকে পোহাতে হত চরম দুর্ভোগ, তাওহীদুল ইসলাম সুমন এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় রাস্তাটি দ্রুত ইটের সোলিং করা হয়েছে, এতে লাঘব হয়েছে এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ। গ্রামের ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে, গ্রামের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করতে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমুহে ছেলেমেয়েদের অনুপ্রাণিত করেন। এছাড়াও গ্রামের ছেলেমেয়েদের কথা তিনি সবসময়ই ভাবেন তিনি মনে করেন একটি পরিবার থেকে একটি ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলে সেই পরিবারের কষ্ট লাঘব হবে এবং তাকে দেখে আরও অনেকেই উৎসাহিত হবে, তাই তিনি গ্রামের ছেলেমেয়েদেরকে সবসময় উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখান, তার গ্রামটি শেরপুর শহরের খুবই সন্নিকটে হওয়ায় এলাকার ছোট ছোট ছেলেরা শিশু শ্রমে জড়িয়ে পরে, তাওহীদুল ইসলাম সুমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই শিশুশ্রম বন্ধে তাদের অভিভাবকদের বোঝানোর কাজটিও প্রায়ই করেন। তিনি অভিভাবকদের তাদের ছেলেমেয়েদেরকে পড়াশোনা করানোর কথা বলেন। এলাকার অসহায় মানুষদের সবসময় খোঁজ খবর নেন তিনি, বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করেন তাদের, নিজের কষ্টের টিউশনির টাকার কিছু অংশ মানবসেবায় খরচ করেন এই তরুণ, এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণেও করেন সাধ্যমত সহযোগিতা, করোনাকালীন সময়ে মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই তরুণ, করোনাকালীন কঠিন সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবসময় মানুষের কল্যাণে উপজেলা প্রশাসনের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে করেছেন সহযোগিতা, গরীব অসহায় মানুষদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাবার। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ইভটিজিং প্রতিরোধে প্রায়ই এলাকার ছেলে মেয়েদের নিয়ে করেন সচেতনতামূলক বৈঠক সমাবেশ। এলাকার ছেলেমেয়েদের সবসময় উদ্বুদ্ধ করেন পড়াশোনায়। শেরপুর উপজেলায় “বঙ্গবন্ধুর শস্য চিত্রের ” স্থানটিতে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি এবং সংসদ সদস্য বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।
এছাড়াও ভেটেরিনারির একজন ছাত্র হিসেবে এলাকার প্রাণিসম্পদ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানও অব্যাহত রেখেছেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্রদানে ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের তালিকা তৈরি করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালকে করেছেন সহযোগিতা, তার মাধ্যমে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত খামারী উপকৃত হয়েছেন, যারা এই প্রণোদনার বিষয়ে কোন কিছু জানতই না। তাওহীদুল ইসলাম সুমন নামের এই তরুণ নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তার মানবকল্যানমূলক কাজ অব্যাহত রেখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলেই তিনি বাসায় চলে আসেন আর নিজেকে নিয়োজিত করেন মানবসেবায়। তার এমন মহতী কর্মকান্ডের জন্য তিনি উপজেলায় বেশ সুপরিচিত। তাওহীদুল ইসলাম সুমন এর সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি ২০১৭ সাল থেকে ছয় বছর যাবৎ এমন কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি এসব করতে সমস্যা হয়কি না জানতে চাইলে তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, সমস্যা তো একটু হয়ই তারপরেও করি কারণ মানুষের প্রয়োজনে তাদের বিপদে কিছু করতে পারলে খুবই ভাল লাগে তাই করি, মানবকল্যাণমূলক কাজের মাঝে অন্যরকম আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। মানবপ্রমীরা মনে হয় এমনই হয়। করোনাকালীন সময়ে মানবসেবায় অসাধারণ অবদান রাখায় তিনি পেয়েছেন “করোনা যোদ্ধা” সম্মাননা। তাওহীদুল ইসলাম সুমন আরও বলেন তিনি যতদিন বাঁচবেন ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান।