হিটলুর ডাবু জুয়ায় ২০দিনে ৩০লক্ষ টাকা লোকসানঃ ম্যানেজ করতেই শেষ নিজের কিছু থাকেনা

187

বিশেষ প্রতিনিধি, বগুড়াঃ

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের শৈলধুকড়ী গ্রামের লোহার সেতুর উত্তর পাশে একটি বট গাছের নিচে বসছে ডাবু জুয়া। গত ২মাস ধরে ওই স্থানে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলছে। ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ি গ্রামের আরিফুল ইসলাম হিটলু(৩৮) তার সহযোগীদের নিয়ে এটি করে আসছেন।
শাজাহানপুর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন যানবাহনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার জুয়াড়িরা আসছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে জুয়া আয়োজক কমিটির লোক রাখা হয়েছে। স্বন্দেহ ভাজন কাউকে দেখলেই আসরে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে জুয়া বসানোর পূর্বেই পুলিশ এসে লোহার সেতুর পাশে অবস্থান নেন। সে সময় জুয়াড়িরা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে পড়ে। পুলিশ সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পাশের গোবিন্দপুর গ্রামে যাওয়ার সাথেই জুয়া আবারো চালু হয়। পরে পুলিশ সেখানে আর আসেনাই। প্রতিদিন শতাধিক জুয়াড়ি মোটর সাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিক্সা সহ বিভিন্ন যানবাহনে খেলতে আসেন।
শৈলধুকড়ী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এলাকার কিছু চিহ্নিত জুয়াড়ি এই জুয়ার আয়োজন করে আসছে। লোহার সেতুর উত্তর পাশে বসা ডাবু জুয়া চলছে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে। তার আগে লক্ষিপুর এবং শৈলধুকড়ী গ্রামের সীমানায় খালের ধারেও বসাতেন। স্থানটি শাজাহানপুর, শেরপুর এবং ধুনট উপজেলার সীমান্তবর্তি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগায় জুয়াড়িরা।
লক্ষিপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আমাদের এলাকায় জুয়া বসুক তা আমরা চাইনা। কিন্তু প্রতিবাদ করলে বাড়ি থেকে গরু সহ মাঠ থেকে সেচ মেশিন চুরি হওয়ার ভয় আছে। এর আগেও অনেকবার এরকম চুরির ঘটনা ঘটেছে।
জানতে চাইলে আমরুল ইউনিয়নিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বিমান বলেন, চিহ্নিত জুয়াড়ি হিটলু এবং তার সহযোগীরা জুয়া চালাচ্ছেন। তবে এটি বসে ধুনট উপজেলার মধ্যে। আমার ইউনিয়নের সীমানার মধ্যে ঢুকলেই আমি নিজে গিয়ে বাধা দিব। উপজেলা পরিষদের মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে অবহিত করেছিলাম। বিষয়টি ধুনট এবং গাবতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারও জানেন।
হিটলু জানে কাকে কী ভাবে ম্যানেজ করে জুয়া চালাতে হয়। এর আগে সে শেরপুর থানার একজন পুলিশকে মেরেছিলো। সেই মামলা এখনও চলমান আছে। খারাপ লাগলেও সত্য যে গ্রেফতারের পরপরই সে বেড়িয়ে আসে এবং আগের মতই জুয়া চালায়।

জানতে চাইলে জুয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, জুয়াড়ি সংগ্রহ করে ডাবু পর্যন্ত নিয়ে গেলেই দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দেন হিটলু। এই কাজের জন্য বিভিন্ন হাট বাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আমাদের আলাদা লোক আছে। ঝামেলা কখনো কখনো হয়। হিটলু আবার সব ঠিক করেও নেন। হিটলুর প্রশংসা করে তিনি বলেন “হিটু আসলেই একজন ম্যানেজ মাস্টার”।

আমি এবং আমার মত অনেকে আছেন যারা রাস্তায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করি। স্বন্দেহ ভাজন কাউকে দেখলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের কাছে মোবাইল ফোনে খবর দেয়াই আমাদের কাজ। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই কাজে আমরা জনপ্রতি ৭শত থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকি।
আরিফুল ইসলাম হিটলু মোবাইল ফোনে বলেন, জুয়া এখন ভালো চলছেনা। গত ২০দিনে ৩০লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। সব ম্যানেজ করতেই টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। নিজের কাছে কিছুই থাকেনা।
শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শুক্রবার সেখানে কয়েকজন অফিসারকে পাঠানো হয়েছিলো। আবারো জুয়া বসানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছবিঃ প্রতীকি