নন্দীগ্রামে বয়স্ক ভাতা পেয়েও বঞ্চিত শামসুল, ভিক্ষার টাকায় চিকিৎসা

142

নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের পশ্চিমপাড়া (হাম্পেগাড়ী) এলাকার ভূমি ও গৃহহীন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ শামসুল আলম। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তার মাথা গোঁজার ঠিকানা অন্যের জায়গায় টিনের ঘর আর মেঝেতে বিছানা। প্রায় দুই যুগ ধরে উপজেলা সদরে রিকশা চালাতেন এই বৃদ্ধ। স্বপ্ন ছিল, পরিশ্রমের আয় দিয়ে জমি কিনে বাড়ি করবেন। কিন্তু বিধিবাম। একযুগ পূর্বে হঠাতই অসুস্থ হয়ে প্যারালাইজড আক্রান্ত রিকশাচালক শামসুল এখন প্রতিবন্ধী প্রায়। তার দিকে তাকালে চোখে পড়ে কোটরাগত ক্ষুধার্ত চোখ। আর ফ্যাকাসে মুখে অসহায়ত্বের নিদারুণ যন্ত্রণা। পায়ে ভর করে হাঁটতে পারেন না। চলারমতো হুইল চেয়ারও ভাগ্যে জোটেনি। পেটের তাগিদে লাঠিভর ও স্ত্রী মাজেদা বিবির হাতেভর দিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়। হাত পেতে যা পায়, তা দিয়েই চলে সংসার আর চিকিৎসা খরচ।

গতকাল আবেগাপ্লুত কণ্ঠে অসহায় শামসুল বলেন, বিশ বছর এসকা চালাচি। হঠাট করে অসুখ, পেরালাইজ হচে। দশ বারো বছর ধরে হাঁটপের পারিনে। বয়স্ক ভাতা পাচুনু, মেলাদিন টেকা তুলচি, একন আর দেয়না। বয়স্ক ভাতা বলে কাটে দেচে। একন ভিক্ক্যা করে ওষুদ কেনা লাগে। টিএনও, চেয়ারম্যান, নেতাকেরে কাছে বহুবার গেছি, কেউ দেয়না। মানস্যের কাছে হাত পাতলে তারা কয়, হামরাই ভাত পাইনে, তোকেরেক কুটি থ্যাকে দিমু। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্যে সবগুলির কাচে গেছি, কেউ দেয়না।
শামসুলের পরিবার জানায়, তার অসহায় অবস্থা দেখে ২০১৫ সালে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করে দেন পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সুশান্ত কুমার শান্ত। ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত ভাতার টাকা উত্তোলনের পর থেকে তিনি আর ভাতা পাননা। সেসময়ের মেয়র কামরুল হাসান জুয়েল বয়স্কভাতার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেন বলে জানতে পারেন। এরপর প্রতিবন্ধী ভাতা আর একটা ঘরের জন্য ইউএনও-মেয়রের কাছে ঘুরেছেন। একটি হুইল চেয়ারেরও ব্যবস্থা হয়নি।
পৌরসভার মেয়র মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমার জানামতে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিল। পরবর্তীতে পৌরসভার মধ্যে ৫২ জনের কার্ড ভাতাভোগীদের ভোটার আইডি কার্ডে বয়স কম হওয়ার কারণে ভাতা বাতিল করেছে সমাজ সেবা অফিস। প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করতে গেলেও নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিফা নুসরাত বলেন, বেশকিছুদিন পূর্বে অসুস্থ শামসুল আলম এসেছিলেন। অফিসের স্টাফের সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে সমাজ সেবা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছিলো। পরবর্তী ব্যবস্থা হয়েছে কিনা, জানা নেই।