মেলা শহরে আর টিকিট বিক্রি গ্রামে গ্রামে

107

অনলাইন ডেস্ক

মোটর সাইকেলের লোভে বগুড়ার শাজাহানপুরের ডোমনপুকুর গ্রামের দিনমজুর সাইফুল ইসলাম প্রতিদিন ২০টি টিকিট কেনেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে টিকিট কিনেই চলেছেন, কিন্তু তাঁর ভাগ্যে এখনও জোটেনি মোটরসাইকেল। প্রতিটি টিকিটের দাম ২০ টাকা। এতে তাঁর এক সপ্তাহে টিকিটের পেছনে গচ্ছা গেছে দুই হাজার ৮০০ টাকা। মোটরসাইকেল পাবেন- এ আশায় এখনও হাল ছাড়েননি। লটারির টিকিট কেনার কারণে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও মনোমালিন্য শুরু হয়েছে।

বগুড়া সদরের মানিকচক উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায়ও টিকিট কেনার জন্য কোমলমতি প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই। রবিউল ইসলাম নামে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, মোটরসাইকেল পাবার আশায় সে প্রতিদিন দুটি টিকিট কেনে।সদরের পল্লীমঙ্গল হাটের ব্যবসায়ী শফিউল আলম শিবলু জানান প্রতিদিন এই এলাকায় অটোরিকশায় মেলার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ গুলো মোটরসাইকেল পুরস্কারের আশায় একাধিক টিকিট কিনছে। মেলার প্রবেশ গেটেও প্রতিদিন স্কুল-কলেজপড়ুয়া শত শত শিক্ষার্থী টিকিট কিনছে। এই টিকিট মেলায় প্রবেশের টিকিট নাম করে বিক্রি করা হলেও ওই টিকিটের ক্রেতারা মেলায় যান না। বিশেষ করে গ্রামে গ্রামে অটোবাইকে করে ঘুরে ঘুরে যেসব টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে ওই টিকিটের ক্রেতারা মেলা কোথায় হচ্ছে, অনেকে তাও জানেন না।
জানা যায়, যে মেলার নাম করে টিকিট বিক্রি, তা হচ্ছে বগুড়া শহরের মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল মাঠে। ২৩ মে মাসব্যাপী তাঁতবস্ত্র, কুটিরশিল্প ও পণ্যমেলার উদ্বোধন করা হয়। বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া কালেক্টরেট কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী পরিষদ জেলা প্রশাসক কার্যালয় বগুড়ার আয়োজনে মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হয়।

গাবতলীর নাড়ূয়ামালা এলাকার চা বিক্রেতা ফজল মিয়া জানান, তিনি প্রতিদিন ৩-৪টি টিকিট কেনেন মোটরসাইকেলের আশায়, মেলায় যাওয়ার জন্য নয়। মেলা কোথায় কোন মাঠে হচ্ছে তা তিনি জানেন না। টিকিটে লেখা আছে প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টায় মেলা মঞ্চে প্রবেশের টিকিটের ওপর লটারি হবে। লটারিতে প্রতিদিন ৩-৪টি মোটরবাইকসহ নানা আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়ার কথা বলে টিকিট বিক্রিও বাড়ানো হয়। এই টিকিট বিক্রেতারা প্রতিদিন পান ৪০০ টাকা।

মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে মো. আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে টিকিট বিক্রি করার উদ্দেশ্য টিকিট বিক্রি বাড়ানো। প্রতিদিন ৪-৫টি মোটরসাইকেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মোটরসাইকেলের টাকা তুলতেই গ্রামে গ্রামে টিকিট বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
বগুড়া কালেক্টরেট কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘এ থেকে আমাদের সমিতির আয় হবে এই আশায় মেলার সঙ্গে আমাদের সংগঠন যুক্ত হয়েছে। তবে কী সুবিধা, কোন খাত থেকে পাওয়া যাবে তা আমার জানা নেই।’
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হামিদ মিঠুল বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন মানুষ বিনোদন থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই বিনোদনের জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশ টিকিটের ওপর শুভেচ্ছা পুরস্কার হিসেবে প্রতিদিন মোটরসাইকেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
মেলার প্রবেশ টিকিটের ওপর লটারির বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক বলেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে প্রবেশ টিকিট বিক্রি করা ঠিক নয়। এভাবে টিকিট বিক্রি বন্ধ করা হবে। কোনো রকম লটারি মেলায় চলতে দেওয়া হবে না।