ভ্যাকসিনের ভায়েল ও সিরিঞ্জ ভাঙরী দোকানে পাঠালেন ইপিআই টেকনিশিয়ান

176

ডেস্ক নিউজঃ

বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কার্টুনে ভরা বিপুল পরিমান করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের খালি ভায়েল, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির(ইপিআই) খালি ভায়েল, অল্প পরিমানে ডায়লুয়েণ্ট এবং ব্যবহৃত সিরিঞ্জ একটি ভ্যানে বোঝাই করে বিক্রি করতে পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালেরই একজন কর্মচারী। শনিবার(২৫জুন) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ভ্যানটি ৪টার দিকে মাঝিড়া একটি ভাঙরী ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রির জন্য থামে। সিরিঞ্জ, ভায়েল, এবং ডায়লুয়েণ্ট গুলো হাসপাতালের ইপিআই টেকনিশিয়ান মোছাঃ হাসিনা খাতুন বিক্রির জন্য দিয়েছেন বলে ওই ভ্যন চালক আনোয়ার হোসেন(৫০) জানিয়েছেন। এই ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন হাসিনা খাতুন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন এগুলো বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরেজমিনে জানাযায়, বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ইপিআই টেকনিশিয়ান মোছাঃ হাসিনা খাতুন ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, করোনা ভাইরাস এবং ইপিআই টিকার খালি ভায়েল এবং প্রতিটাতে অল্প পরিমানে থাকা ডায়লুয়েণ্ট ৪টি কার্টুনে ভরে একটি ভ্যানে মাঝিড়া স্ট্যান্ডে একটি ভাঙরী ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রির জন্য পাঠান। সেগুলো হাসপাতাল থেকে পাঠিয়ে হাসিনা খাতুন অন্য একটি অটো রিক্সায় মাঝিড়া সাজাপুর বেলপুকুর স্কুলের সামনে অবস্থান করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।

ভ্যান চালক আনোয়ার হোসেন জানান, আমাকে ওই মহিলা(হাসিনা খাতুন) একশত টাকা ভাড়ায় হাসপাতাল থেকে মাঝিড়া স্ট্যান্ডে একটি ভাঙরী ব্যবসায়ীর দোকানে নিতে বলেন। আমি টাকার জন্য শুধু ভাড়ায় ভ্যান চালিয়েছি মাত্র। এখানে আমার কোন দোষ নেই।

ইপিআই টেকনিশিয়ান মোছাঃ হাসিনা খাতুন জানান, আমি একজন নারী। আমার সন্মান নস্ট কইরেন না। আমাকে মাফ করে দেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত একজন মেডিসিন ডাক্তার জানান, ভ্যাকসিনের খালি ভায়েল এবং ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ধ্বংস করতে হয়। এগুলো বাহিরে গেলে আবারো ব্যবহার হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানিনা কার দেহে কী রোগ রয়েছে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জে কোন না কোন জীবানু রয়েছে। সেগুলো আবারো অন্য কোন মানবদেহে প্রবেশ করালে শতভাগ স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এটা কোন ভাবেই করা যাবেনা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন স্বাস্থ্য সহকারী জানান, ইপিআই টেকনিশিয়ান মোছাঃ হাসিনা খাতুন অনেক আগে থেকেই হাসপাতালের মালামাল বিক্রি করে খান। এর আগেও এরকম ঘটনায় মাসিক বৈঠকে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পরিবর্তন হননি। কর্তৃপক্ষও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

বগুড়া সিভিল সার্জন মোঃ শফিউল আজম মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি আমার জানা নাই। আমি শাজাহানপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সেগুলোকে নিয়ে আসার জন্য বলে দিচ্ছি। তিনি সেগুলো ফিরিয়ে এনে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। সিরিঞ্জ, ভায়েল বিক্রির কোন বিধান নাই। এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আহমেদ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারকে ডেকে সেগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হয়েছে। এগুলো বিক্রি শাস্তি যোগ্য অপরাধ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মোতারাব হোসেন জানান, আমার অনুমতি ছাড়া হাসপাতালের কোন ওষুধ বা এই জাতীয় কোন জিনিস হাসপাতালের বাহিরে আসবেনা। এ ক্ষেত্রে আমাকে জানানো হয়নি। সিরিঞ্জ এবং খালি ভায়েল গুলো হাসপাতালের ভিতরেই ধ্বংস করতে হবে। এগুলো বিক্রির কোন সুযোগ নাই।