বগুড়া এক্সপ্রেস ডেস্ক
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে গত জুলাই থেকে দেশের শেয়ারবাজারে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ পদে। এরপর থেকেই বাজার ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পরপর দুবার বিশ্বের অন্যান্য পুঁজিবাজারকে পেছনে ফেলে সেরা তালিকায় স্থানও পেয়েছে বাংলাদশের শেয়ারবাজার। এখন শেয়ারবাজারের ভিত শক্ত করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। অতি সম্প্রতি শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে বিএসইসি। গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ সহায়তা চান। বর্তমানে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসে নেতিবাচক ইক্যুইটি কমাতে এই তহবিল ব্যবহার হবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। শেয়ারবাজারের ভিতও শক্তিশালী হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে নীতিগত সমর্থন পাওয়া গেছে। অর্থাৎ অচিরেই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হচ্ছে। এই তহবিল পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এই তহবিল থেকে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবে। এতে করে বাজারের উন্নতি হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনার ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। এখন যদি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হয়, তাহলে বাজারের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়বে। তবে এটি নির্ভর করবে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে।’ কারণ, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় আক্রমন কেমন হবে, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করছে।’
এদিকে গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৪২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
তথ্য বলছে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৯৬২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ২৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। মোট লেনদেন কমার কারণ দুর্গাপূজা উপলক্ষে লেনদেন বন্ধ ছিল।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই’র বেশিরভাগ সময় সূচক ও লেনদেনে বিপরীতমুখী অবস্থান ছিল। সূচক বাড়লে লেনদেন কমে। আবার লেনদেন বাড়লে সূচক কমে। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে সব ধরনের মূল্য সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ১৬.৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহ শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৪৬ দশমিক ১০ পয়েন্ট। সপ্তাহের শুরুতে সূচকটির অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৯১৪ দশমিক ০৪ পয়েন্টে।
যদিও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ শেষ করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ হারালেন বিনিয়োগকারীরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৫১ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। আর আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। তার আগের সপ্তাহে কমে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা এবং তারও আগের সপ্তাহে কমে ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা চার সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৭ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে ডিএসই’র অপর দুই সূচকও। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১৫ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১২ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।
মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল ১০৬টি প্রতিষ্ঠান। দাম কমেছে ২১০টির। আর ৪৪ টি প্রতিষ্ঠানের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের ব্যাবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ১৫৫ কোটি ৩২ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি ১ কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার শেয়ার হাতবদল করেছে।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটির ১০১ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।