সান্তাহারে মানুষগুলোই ট্রেনে কাটছে না হত্যা করে ট্রেনে কাটার ঘটনা সাজানো হচ্ছে!

179

মোঃশিমুল হাসান (আদমদীঘি), প্রতিনিধি ঃবগুড়া আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে ট্রেনে কেটে মারা যাবার ঘটনা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। প্রতিমাসে গড়ে চারজন করে মানুষ মারা গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিচয় মিলছে না। ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় দাফন করে ফেলা হচ্ছে। এদিকে একের পর এক কেন এত অপমৃত্যু তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশ। বেশির ভাগ মামলাই অনুদঘাটিত থাকার কারণে অপরাধ সংগঠনের সুযোগ থাকছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে বড় এই রেলওয়ে জংশনে প্রয়োজনের তুলনায় রেল পুলিশের সংখ্যা অতি নগন্য। এ কারণে অপরাধীরা তাদের অপরাধ সংঘটনের সুযোগ নিতে পারে। যেকোনো হত্যাকাণ্ডকে ট্রেনে কেটে মৃত্যু বলেও প্রচার করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার রেলওয়ে থানাধীন জামালগঞ্জ রেলস্টেশনের উত্তর পাশের বস্তি এলাকা অতিক্রম করার সময় এক যুবক কাটা পড়ে মারা যায়। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে চলন্ত ট্রেনের দরজা থেকে পড়ে গিয়ে অজ্ঞাত ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগের শনিবার সন্ধ্যায় পাঁচানীপাড়া নামক স্থানে ট্রেনে কাটা ছিন্নভিন্ন ও শুক্রবার রাতে স্টেশনের প্লাটফরম থেকে অজ্ঞাত পৃথক আরো দুটি লাশ উদ্ধার করে রেল পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে গত সাত মাসে ট্রেনে কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ২৫টি। রেলওয়ে পুলিশের অপমৃত্যু রেজিস্ট্রার হিসাব ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে সান্তাহার রেলওয়ে থানাধীন এলাকায় ট্রেনে কাটা অপমৃত্যু মামলা হয় মোট ২৫টি। এর মধ্যে ১১টি লাশের পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ১৪টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের সহযোগিতায় সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

রেলওয়ে থানা পুলিশের দাবি, অসাবধানতায় রেললাইন পারাপার, ট্রেনের ছাদে ও দরজায় ভ্রমণ, চলন্ত ট্রেনে ওঠানামা, ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা, কুয়াশায় ট্রেন দেখতে না পাওয়া, ট্রেনের ছাদে ঘুমিয়ে পড়া, ট্রেন দুর্ঘটনা ও বগির সংযোগস্থলে বসে ভ্রমণ এবং ট্রেন থামার আগে নামার চেষ্টা এসব দুর্ঘটনার জন্য বড় কারণ। সান্তাহার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজের আলী সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেনের ধাক্কা বা নিচে পড়ে এসব দুর্ঘটনার কারণে নিহতদের চেহারা ও দেহ বীভৎস হয়ে যায়। ফলে তাদের অনেকেরই নাম-পরিচয় পাওয়া যায় না। তা ছাড়া কিছু লাশের কাপড় ও মানিবাগে পরিচয়পত্র দেখে শনাক্ত করা গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। সাধারণ মানুষ ট্রেন ভ্রমণে সচেতন হলে নিহতের সংখ্যা কমবে। তিনি আরো জানান, ২০০ কিলোমিটারের সান্তাহার রেলওয়ে থানাধীন এলাকায় রয়েছে দক্ষিণে নাটোরের মালঞ্চি ও উত্তরে দিনাজপুরের হিলি এবং পূর্ব দিকে বগুড়ার সোনাতলা। বিশাল এ কর্ম এলাকায় আইনসৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছেন ওসি, এসআই, মুন্সি ও কনেস্টেবলসহ সর্বমোট ৩৫ জন পুলিশ সদস্য। সান্তাহার জংশনের স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান হাবিব সাংবাদিকদের জানান, সান্তাহার স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন সর্বমোট ৩৬টি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে মিটারগেইজে ১২টি ও ব্রডগেইজে ২৪টি ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। তারা শুধু এসব ট্রেনের যাত্রীদের সেবা প্রদানের দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে রেল পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে সম্প্রতি এই স্টেশনের আওতায়ভুক্ত এলাকাসমূহে ট্রেনে কেটে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।