গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় ছিলো লাখো মানুষের ঢল

203

গাবতলী (বগুড়া)প্রতিনিধিঃ উৎসব মুখর পরিবেশে লাখো মানুষের পদচারনায় এবার মুখরিত হয়ে উঠেছিল বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। পুলিশ প্রশাসন ও মেলা আয়োজকদের সফল নজরদারীর কারণেই মাছ, মিষ্টি ও কাঠের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা এই পোড়াদহ মেলা ১০ফেব্রুয়ারী বুধবার সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ১১ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার উপজেলার পশ্চিম মহিষাবান ও রানীরপাড়া গ্রামে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা। এই বউমেলার দর্শনার্থীরা হবে শুধু নারীরাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এবারের পোড়াদহ মেলায় কমপক্ষে এক’শটি মাছের দোকান বসেছিলো। এরমধ্যে মাছ ব্যবসায়ী শুকুর সাকিদার নামের জনৈক এক মাছ ব্যবসায়ী যমুনা নদীর ৬৮কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির একটি বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছিলেন। যার দাম হাঁকা হয়েছিলো এক লাখ টাকা। তবে এ মাছটি বিক্রি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কেটে ১২’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। আর ৬০, ৬৫ ও ৪২ কেজি ওজনের জীবিত বাঘাইড় মাছ কেটে বিক্রি হয়েছে ১১’শ থেকে ১২’শ টাকা কেজিতে। মাছ ব্যবসায়ী সুরমান আলী যমুনা নদীর ৬৫ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ মেলায় নিয়ে এসেছিলেন। তিনিও একই দামে বিক্রি করেছেন। মেলায় আসা সোহাগ হাসান নামের জনৈক এক জামাই সাড়ে ৪’শ টাকা কেজি দরে ১২কেজি ওজনের একটি ব্রিগেড মাছ ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, পছন্দের মাছ হওয়ায় দামটা একটু বেশীই নিয়েছে। এছাড়াও মেলায় ১৮কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাকানো হয়েছে প্রতি কেজি ১৫শ টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ৮’শ টাকা, আইড় মাছ ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। রুই বিক্রি হয়েছে ৬’শ টাকা কেজি, চিতল ১২’শ টাকা কেজি, পাঙ্গাস ৩’শ টাকা কেজি, ব্রিগেড ৩’শ ৫০টাকা কেজি, ব্লাডকাপ ৭’শ টাকা কেজি, ১০কেজি ওজনের উপরে সিলভার কাপ ৪’শ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় মাছও মেলায় উঠেছিল। এবারের মেলায় মাছ আকৃতির সবচেয়ে বড় মিষ্টি তৈরী করেছেন গাবতলীর মহিষাবান গ্রামের বিশিষ্ট মিষ্টি ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ। ১০কেজি ওজনের এই মিষ্টিগুলো ৩’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আঃ লতিফ তার মিষ্টির দোকানে ২’শ মনেরও বেশী মিষ্টি বিক্রি করেছেন। ধোঁরা গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী বাদশা এবারের পোড়াদহ মেলায় মোট ৮০মন মিষ্টি বিক্রি করেছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। এছাড়া অন্যান্য মিষ্টি দোকানে ১কেজি, ২কেজি, ৩কেজি, ৪কেজি ওজনের শত শত মন মিষ্টি কেনাবেচা হয়েছে। মেলায় মাছ, মিষ্টি, গরুর মাংস, বড়ই (কুল), কাঠ ও ষ্টীলের ফার্নিচার, কস্মেটিকসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী হাট-বাজারের মতোই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে চোখে পড়ার মতো। মেলায় লাখো মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও গাবতলী থানা সদরে কাজী বাজারে, দূর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, দাঁড়াইল বাজার, বাইগুনি হাটসহ বিভিন্ন বাজারে বাজারে মাছ-মিষ্টির মেলা বসেছিল। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো মেলার নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর ও গাড়ীদহ নদীর পূর্বপাশে পোড়াদহ নামকস্থানে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে মেলাটি বসেছিল। প্রায় ৪’শ বছর আগে থেকে সন্ন্যাাসী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরে বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ বুধবার একদিনের জন্য মেলাটি বসে। মেলাটি একদিনের হলেও তিনদিন পর্যন্ত চলে। মেলা উপলক্ষে পার্শ¦বর্তী উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের ঢল নামে মেলায়। এ ব্যাপারে মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। মেলায় মেয়ে-জামাই, আত্মীয় স্বজনসহ লাখো মানুষের পদচারণা মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা গাবতলী এলাকা। মেলায় শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক বিচিত্র গান, নাগোরদোলা, চরকি এবং মটরসাইকেল খেলা ছিল। গাবতলীর ইউএনও রওনক জাহান ও মডেল থানার তদন্ত ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে প্রতিবছরের মতো আজ বৃহস্পতিবার গাবতলীর পশ্চিম মহিষাবান ও রানীরপাড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা। পশ্চিম মহিষাবান গ্রামের বউমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফি নেওয়াজ খান রবিন এবং রানীরপাড়া গ্রামের বউমেলা উদ্বোধন করবেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু।