শাজাহানপুরে ইনসিওরেন্স কোম্পানির প্রতারণায় দিশেহারা দরিদ্র জনগোষ্ঠি

147

আরিফুর রহমান মিঠু, বিশেষ প্রতিনিধি: বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন(৫০)। গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড এর উপজেলার নয়মাইল শাখার কর্মী তার কাছে এসে জানালেন প্রতিমাসে ৫শত টাকা করে ১০বছর টাকা জমা রাখলে ৬০হাজার টাকা জমা হবে। আর ওই প্রতিষ্ঠান আনোয়ারকে দিবেন ১লক্ষ ২০হাজার টাকা। মাসে ৫শত টাকা গায়ে বাঁধবেনা। প্রথম মাসের টাকা জমা দেয়ার পরে যদি আনোয়ার মারাও যান তবুও পুরো ১লক্ষ ২০হাজার টাকা তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে। মৃত্যু অথবা মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে টাকা পাওয়া যায়। এরমধ্যে অসুস্থ্য চলে চিকিৎসা সহ নানান সুযোগ সুবিধা কোম্পানির তরফ থেকে দেয়া হবে। ব্যাংক, পোস্ট অফিস এনজিও কোথাও কেউ এত সুবিধা একসাথে দিতে পারবেনা।

মাঠ কর্মীর কথায় প্রলুব্ধ আনোয়ার হোসেন গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড এর উপজেলার নয়মাইল শাখায় ০৩৮৪-৩৩০০১১০১-৯ নং পলিসি খুলে মাসিক ৫শত টাকা জমা শুরুর সাথে স্বপ্ন বুনন শুরু করলেন। জমা টাকার অঙ্ক বাড়ার সাথে স্বপ্ন ঘনিভূত হয় আনোয়ারের। দীর্ঘ ১০বছর পর আনোয়ারের স্বপ্ন ছোঁয়ার সময় এলো। কিন্তু আনোয়ার কিছুই পেলোনা। ১৩বছরের বেশি সময় চলে গেলেও গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড তাকে এক টাকাও দিলোনা।
আনোয়ারের মত এমন বর্ননা দিলেন উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের স্ত্রী গৃহিনী মর্জিনা বেগম(৫৫), প্রলুব্ধ হয়ে ডেল্টা লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড এর উপজেলার বি-ব্লক শাখায় মাসিক ২শত ২৫টাকা করে ১৫বছর মেয়াদে প্রিমিয়াম খুলেছিলেন। ডিম, মুরগি বেচা টাকা অফিসে দিতেন। মেয়াদ শেষ হয়েও আরো কত মাস কেটে গেছে কিন্তু টাকা এখনো পাননি। খোঁজ নিতে অফিসে গেলে তার কাছ থেকে আরো ২থেকে ৫শত টাকা করে নেয়। কিন্তু অফিস থেকে টাকা দেয়না। তার গ্রামে আরো অনেকেই এভাবে টাকা দিয়ে আর তুলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।
হতাশ আনোয়ার জানালেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ইনসিওরেন্স কোম্পানি গুলোর প্রলোভনে প্রতারিত হচ্ছেন নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষ। তার রক্ত পানি করা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি। টাকা ফেরৎ সহ কোম্পানির বিরুদ্ধে দৃস্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রেখেছেন।
গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড বগুড়া অফিসের হিসাব রক্ষক মোঃ ইমন হোসেন জানান, আগে যারা চাকরি করতেন তারা এমন করেছেন। তিনি ম্যানেজারকে জানিয়েছেন।
ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ফজলুল হক রানা মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ঢাকা অফিসে আছেন। আগের স্টাফরা থাকতে কিছু সমস্যা ছিলো সেগুলো পর্যায় ক্রমে ঠিক করা হচ্ছে।
ওই প্রতিষ্ঠানের জমার রসিদ বইয়ে উল্লেখ করা ঢাকা হেড অফিসের টেলিফোন নাম্বারে ৯৫৬৩৪৩১, ৯৫৬১১২৭, ৯৫৫১৬২৯, ৯৫৫১৬৩১ যোগাযোগ করা হলে গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স অফিসের নাম্বার নয় বলে টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হচ্ছে।
শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসিফ আহমেদ জানান, প্রতারিত করছে এমন ইনসিওরেন্স কোম্পানি গুলোর অফিস যদি শাজাহানপুরে থাকে তাহলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। অথবা ওই অফিসের কর্মীরা যদি শাজাহানপুরে আসে তাহলে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।