বগুড়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম গ্রেপ্তার

176

স্টাফ রিপোর্টার

বগুড়ার ত্রাস শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা নাদিম প্রামানিক কে গতকাল শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হয়ে পলাতক অবস্থায় জামিন নিয়ে ফিরেই প্রতিপক্ষের ওপর পুনরায় হামলা করে ফেঁসে গেছেন তিনি।

বগুড়া শহরের ফুলতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা এই নাদিম।

তিনি ফুলতলা বাজার এলাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মজনু প্রামানিকের ভাগিনা এবং বগুড়া শহর যুবলীগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক। একই সাথে নাদিম ফুলতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি।

শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শুক্রবার রাতে পলাতক থাকা অবস্থায় ফুলতলা এলাকার নিজের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন নাদিম। তার গ্রুপের অন্য দুই সদস্য আবু হানিফ আকন্দ ও মিন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে। নাদিমের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ মোট ৯টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, দক্ষিণ বগুড়ার ফুলতলা এলাকার এক সময়ের শীর্ষ দুই সন্ত্রাসী ছিলেন যুবলীগ নেতা মজনু প্রামানিক ও আমিনুল ইসলাম শাহীন। এই দুই সন্ত্রাসীর দুই গ্রুপের উত্তরসূরী মজনু প্রামানিকের ভাগিনা যুবলীগ নেতা নাদিম প্রামানিক ও শাহিনের ছেলে তৌহিদুর রহমান লিখন। নাদিম ও লিখন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি লিখন গ্রুপের সদস্য ফোরকান নামে এক সন্ত্রাসীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ওই মামলায় নাদিম প্রামানিককে প্রধান করে ১৩ জনকে আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাহিনী প্রধান নাদিম ছিলেন পলাতক। এদিকে এই হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছে বলে দাবি করে দলবলসহ এলাকায় ফিরে আসেন নাদিম। তারা বৃহস্পতিবার রাতে ফুলতলা সরকারি স্কুলের সামনে প্রতিপক্ষ লিখন গ্রুপের সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। এই হামলার নেতৃত্ব দেন নাদিম। সংঘর্ষে লিখন গ্রুপের ৩ জন এবং নাদিম গ্রুপের ১ জন আহত হন।

শুক্রবার বিকেলে হামলার ঘটনায় লিখন গ্রুপের পক্ষে ফয়সাল কবির নামে একজন বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা নাদিমকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপরই রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ বগুড়া ফুলতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে মাত্র ১০ বছরে দু’পক্ষের ১০ জন খুন হন। এক সময় এখানকার সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন দুই বন্ধু শাহীন ও মজনু প্রামাণিক। এরা দুজনই যুবলীগের স্থানীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু অভ্যন্তরীন কোন্দলে প্রথমে শাহীনের হাতে মজনুর বাবা শুকুর আলী প্রামাণিক খুন হন। প্রতিশোধ হিসাবে মজনু গ্রুপের সদস্যরা ফুলদীঘি এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে শাহীনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর থেকেই শাহীন গ্রুপের হাল ধরেন তার ছেলে তৌহিদুর রহমান লিখন। পিতার হত্যার জের ধরে লিখন বাহিনীর হাতে খুন হন মজনুর ভাতিজা শামীম আহম্মেদ বুশ। একই বাহিনীর হাতে একটি বাড়ির ভেতরে পরবর্তী সময়ে খুন হন যুবলীগ নেতা মজনু প্রামাণিক ও তার ভাতিজা নাহিদ প্রামাণিক। এর রেশ কাটতে না কাটতেই বাড়ির অদূরে খুন হন মজনুর ভাই রঞ্জু প্রামাণিক। প্রতিশোধ নিতে আবার মজনু গ্রুপের হাতে খুন হন লিখন গ্রুপের অন্যতম সদস্য শীর্ষ সন্ত্রাসী আকুল। এরই মধ্যে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় শাকপালা মসজিদের সামনে খুন হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ মিস্টার। সর্বশেষ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শাহিন গ্রুপের সদস্য ফোরকানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ফোরকানও দুটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।